আপিল বিভাগের রায়ে তিন আসামির সাজা কমায় হতাশ হয়েছে নিহত অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর পরিবার।
আজ মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) আপিলের রায়ের পর গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর স্ত্রী উমা মুহুরী সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তার প্রবাসী মেয়ে সুদীপ্তা মুহুরী রায়ে হতাশা প্রকাশ করে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। বিডিনিউজ
প্রায় দুই দশক আগে চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় জজ আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ।
রায়ে সর্বোচ্চ আদালত আপিল খারিজের পাশাপাশি সাজা সংশোধন করে আসামিদের স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
এই তিন আসামি হলো তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, মোহাম্মদ আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর। তিনজনই জামায়াত-শিবিরের কর্মী।
এই রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী উমা মুহুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এক কথায় ‘হতাশ’ বলা ছাড়া আর কিছু বলতে চাননি।
চট্টগ্রাম শহরে নিজ বাসায় বসে রায়ের খবর শুনেছেন তিনি।
এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “হাইকোর্টে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল ছিল। এখন আদালত সাজা কমিয়ে দিয়েছে। আমার কিছু বলার নেই। যার এরকম হয়েছে, হারিয়েছে তারাই জানে কষ্ট কী। আমি ছেলেমেয়েদের কী জবাব দেব?”
প্রবাসে থাকা সুদীপ্তা মুহুরী সোমা ফেসবুকে লিখেছেন, “বাবাকে হত্যার আপিল বিভাগের রায়!!! স্যার ডেকে, সকালে ঘুম থেকে তুলে, ওরা চেয়ারে বসিয়ে বাবার মাথায় শুধু দুটা গুলি করেছিল। কী ঠাণ্ডা মাথার হত্যা ছিল সেটা!”
ঐ স্ট্যাটাসে বিভিন্নজনের দেওয়া মন্তব্যের উত্তরও দিয়েছেন তিনি। সেখানে এক জায়গায় সুদীপ্তা বলেন, “তারপরও… ভাল কিছু কি আমরা পেতে পারতাম না?”
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর নগরীর জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর (৬০) বাসায় ঢুকে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
তার স্ত্রী রেলওয়ের তৎকালীন অডিট কর্মকর্তা উমা মুহুরী সেদিনই চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঐ মামলার বিচার শেষে নাসির ওরফে গিট্টু নাসির, আজম, আলমগীর ও মন্টুকে মৃত্যুদণ্ড দেয় জজ আদালত।
এছাড়া মহিউদ্দিন ওরফে মহিনউদ্দিন, হাবিব খান, সাইফুল ওরফে ছোট সাইফুল ও শাহাজাহানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।
বিচারিক আদালতের ঐ রায়ের পর মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে, পাশাপাশি কারাগারে থাকা আসামিরাও আপিল করে।
এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া গিট্টু নাসির ২০০৫ সালের ২ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। মারা যায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ছোট সাইফুলও।
হাইকোর্ট শুনানি শেষে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০০৬ সালের ১৯ জুলাই রায় দেয়। সেই রায়ে যাবজ্জীবন সাজার আসামি শাহাজাহান ও সাইফুল ওরফে ছোট সাইফুল খালাস পায়, অন্যদের সাজা বহাল থাকে।
এরপর মৃত্যদণ্ডের তিন আসামির মধ্যে আলমগীর কবির খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করে। আর তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, মোহাম্মদ আজম করে জেল আপিল।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত বলেন, “আজকে শর্ট অর্ডার হয়েছে। আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ তবে তাদের সাজা সংশোধন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। কোন যুক্তিতে কেন সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তা পুরো রায় বের হলে জানা যাবে।”
তিন আসামি এতদিন কারাগারে কনডেম সেলে ছিল জানিয়ে অমিত দাশগুপ্ত বলেন, “তাদের এখন কারাগারে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করা হবে।”