‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে/ উছলে পড়ে আলো/ ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো…।’ রবীন্দ্রনাথের এই গানটি হুমায়ূন আহমেদ তাঁর অনেক সৃষ্টিকর্মে ব্যবহার করেছেন। সম্ভবত এই গানটি তাঁর খুব পছন্দ। চাঁদ, জোৎস্না বাংলাসাহিত্যের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে। ‘বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ঐ…।’ চাঁদ কি বাঁশবাগানে থাকে! না মোটেও নয়। ‘চাঁদের খবর বলছি শোনো/ চাঁদেও আছে পানি/ মানুষ চাঁদে ঘর বাঁধবে বলেছে বিজ্ঞানী/ কিন্তু চাঁদের বুড়ি/ চড়কা দিয়ে সুতো কাটে এবং ওড়ায় ঘুড়ি/ সেই বুড়িটির খবর কি ভাই? আছে তোমার জানা?/ তার ঠিকানায় বিজ্ঞানীরা দিয়েছে কি হানা/ ছেলে ভুলানো গল্প ওসব, সত্যি কিছুই নয়/ দত্যি দানো পেত্নি বুড়ি রূপকথাতে হয়/ চাঁদে কোনো গাছপালা নেই/ নেই কোনো এক বুড়ি/ মিথ্যে কথা মিথ্যে কথা/ শুনবো না ধুত্তুরি/ চাঁদে আছে চড়কা বুড়ি এবং পরী/ পরীর ডানায় চড়কা বুড়ি রোজ মেখে দেয় জড়ি/ দাদু জানে মামা জানে আরো সবাই জানে/ বিজ্ঞানীরা শুধু শুধু মিথ্যে খবর আনে/ চাঁদে আছে চড়কা বুড়ি খুঁজলে পাবে ঠিক/ বিজ্ঞানীদের সাথে যদি পাঠায় সাংবাদিক।’
ব্লু–মুন বা নীল চাঁদ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকে ব্লু–মুনকে হোটেল বা রেস্টুরেন্টের নাম ভাবতে পারে। কিন্তু সেটা নয়। ব্লাড মুন, সুপার ব্লাড মুন অর্থাৎ চাদেঁর অনেক রঙ। অথচ সকলে জানে চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। এরপরও চাঁদের রহস্যের কূল–কিনারা পাওয়া যাচ্ছে না। চাঁদে ১৯৬৯ সালে মার্কিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং প্রথম অবতরণ করেন। আর পেছনে যায়নি মানুষ। আসলে ব্ল–মুন কি? কোনো বছরের একই মাসে দুই বার পূর্ণিমার চাঁদ দেখা গেলে দ্বিতীয় পূর্ণিমার চাঁদকে বলা হয় ব্লু–মুন। নামে ব্লু–মুন বা নীল চাঁদ হলেও নীল রঙের সঙ্গে এ চাঁদের সম্পর্ক নেই। তবে একই দিন চন্দ্রগ্রহণ হওয়ায় চাঁদ রক্তিম রং ধারণ করে। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে। ফলে ওই সময় চাঁদে লাল বা কমলা রঙের আভা দেখা যায়। ব্লু–মুন সাধারণ ঘটনা নয়। ব্লু–মুন নিয়ে আছে মতভেদ। ব্লু–মুন নামকরণের দিকে যদি যাওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে ওয়ান্স ইন অ্যা ব্লু–মুন শব্দগুচ্ছের সন্ধান পাওয়া যায় প্রায় ৪০০ বছর আগে। চাঁদকে ব্লু–মুন বলা হচ্ছে সেটির বর্ণ মূলত হালকা ধূসর থেকে সাদা বর্ণের। একই মাসে যদি আরেকটি চাঁদ উঠেও থাকে তাতে নিজের বর্ণের পরিবর্তনের সাথে কোনো যোগসূত্র থাকার কথা নেই। এখানেই শেষ নয়। চাঁদকে নীল দেখা গিয়েছিল ১৮৮৩ সালের দিকে। যদিও সেটা দেখা সম্ভব হয়েছিল এক পার্থিব ঘটনার কারণে। ক্র্যাকাতোয়া নামক আগ্নেয়গিরি যখন বিস্ফোরিত হলো তখন র্যালে স্ক্যাটারিং তত্ত্ব অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণা ফিল্টারের মতো কাজ করতে শুরু করল। এর ফলে অস্তগামী সূর্য এবং চাঁদকে দেখা যেতে লাগলো সবুজ ও নীল বর্ণের। একইভাবে অন্যান্য প্রাকৃতিক ঘটনা, যেমন দাবানল কিংবা ধূলিঝড়ের কারণেও চাঁদকে নীল দেখা যেতে পারে।
এবার রাতের আকাশে দেখা যাবে নীল চাঁদ, এমন বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে চলছে বিশ্ব। বিশ্বের সব জায়গা থেকে দেখা যাবে এই পূর্ণচন্দ্রের মহাজাগতিক দৃশ্য। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, এবার অক্টোবর মাসে দুইটি পূর্ণিমার দেখা মিলবে। এরমধ্যে আগামী মাসের প্রথম ও শেষদিন আকাশে দেখা যাবে চাঁদের রং নীল। ৩০ বছরে এই প্রথমবার পৃথিবীর মানুষ একসঙ্গে দেখতে পাবে ব্লু–মুন। প্রতি ১৯ বছর অন্তর এই বিরল ঘটনা ঘটে থাকে। এর আগে ২০০১ সালে এমনটি ঘটেছিল। আর তারপরে ঘটবে ২০২০ সালে। আর তারপর এই বিরল ঘটনা দেখা যাবে ২০৩৯ সালে। তবে ঐ সময় পৃথিবীর সব মানুষ একসাথে দেখতে পাবে কিনা বলা যাচ্ছে না এখনই। সব মানুষ এই ঘটনা একসঙ্গে দেখেছিল ১৯৪৪ সালে। এরপর আর একসাথে দেখতে পারেনি। বিশ্ববাসী আগামী মাসের শুরু ও শেষদিনে রহস্যঘেরা চাঁদের আরেকটি রূপ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।









