মাত্র ১৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হলেই কক্সবাজার হতে রাঙামাটির দূরত্ব কমবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। সড়কটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রবেশ না করেই পর্যটকরা সহজেই কক্সবাজার থেকে রাঙামাটি যেতে পারবেন। এতে পর্যটন সমৃদ্ধ দুই জেলার পর্যটন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সড়কটি। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও। ইতোমধ্যে সড়কটি নির্মাণে প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ার সাথে উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াকে যুক্ত করা গেলে পর্যটকরা সহজেই রাঙামাটি থেকে কক্সবাজারে যাতায়াত করতে পারবে। এতে রাঙামাটি–কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। পাশাপাশি রাঙামাটি থেকে কক্সবাজারগামী যানবাহনগুলোকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রবেশ করতে হবে না। ফলে যানজট ছাড়াই লোকজন যাতায়াত করতে পারবে। তাছাড়া পুরো পাহাড়ি এলাকা জুড়ে কৃষি পণ্যের আবাদ হয়। সড়কটি হলে কৃষিভিত্তিক শিল্প বিকশিত হবে। আর্থ–সামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকার একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্রস্তাবিত সড়কের কিছু রাস্তা সরকারি বনের মধ্যে পড়েছে। অনাপত্তি পত্রের জন্য আমরা বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। প্রয়োজনে অনুমোদনের জন্য লিখব। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুই জেলার সংযোগের জন্য প্রস্তাবিত ‘পটিয়া–অন্নদাদত্ত–হাইদগাঁও–রাঙ্গুনিয়া জেলা মহাসড়ক (জেড–১০৫৭) যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ কিলোমিটার ৩৬৫ মিটার। প্রকল্পের চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ ৩ বছর। সড়কটি বর্তমানে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের পটিয়ার ডাকবাংলো, হাইদগাঁও, অন্নদা দত্ত হতে প্রস্তাবিত সড়কটি দিয়ে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা গোডাউন ব্রিজ হয়ে রাঙ্গুনিয়ায় মিলিত হবে। রাঙ্গুনিয়া হতে সরাসরি যাওয়া যাবে রাঙামাটি। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে গত ২১ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটারও (চাহিদাপত্র) দেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, স্মার্ট ও দক্ষ সওজ সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপন করার লক্ষে দুই মহাসড়কের মধ্যে ১৫.৩৬৫ কিলোমিটার ‘সড়ক মিসিং লিংক’ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। বিকল্প এ সড়কটি হলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া দুই উপজেলা বাদেও রাঙামাটি, হাটহাজারী, রাউজানের আশেপাশের এলাকার কৃষিভিত্তিক শিল্প বিকশিত হবে। দূরত্ব কমার কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমবে। সহজে গ্রাম থেকে জেলা পর্যায়ের বাজারে কৃষিপণ্য আনা–নেয়া সহজতর এবং জ্বালানি খরচও সাশ্রয় হবে। এতে দেশের পর্যটনের আরেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে বলে প্রকল্পের সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী গতকাল আজাদীকে বলেন, রাঙ্গুনিয়া হয়ে রাঙামাটি মহাসড়ক রয়েছে। রয়েছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কও। দুই সড়কের মধ্যে পটিয়া অংশে হাইদগাঁও পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক ইতোমধ্যে উন্নয়ন হয়েছে। এখন পাহাড়ি এলাকার মধ্যে মাত্র ১৫ কিলোমিটার নতুন করে সড়ক নির্মাণ করলেই নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে কক্সবাজার–রাঙামাটির নতুন সংযোগ স্থাপন হবে।
তিনি বলেন, সড়কটি নির্মাণে আমি সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব বরাবরে ডিও লেটার দিয়েছি। তাঁর সাথে কথাও বলেছি। তিনি সড়কটি নির্মাণে একমত পোষণ করেছেন। পাহাড়ি এলাকা হলেও পাহাড় না কেটে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেই সড়কটি নির্মাণ সম্ভব বলে আমি তাঁকে অবহিত করেছি।