ধর্ষণ থামাতে যা করতে হবে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৪:০৩ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। কখনো বিউটি, কখনো সীমা কিংবা ইয়াসমিন, কখনো রূপা, তনু, নুসরাত। এদের অসময়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল না। যে সময়টাতে স্বপ্ন দেখার, বাঁচতে শেখার কথা, সেই সময়ে তারা হারিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, কর্মহীনতা, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, পর্নো ছবির অবাধ বিক্রি; সর্বোপরি নারীর প্রতি পুরুষের হীন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা। সমপ্রতি ধর্ষণের ভয়াবহতা ও ধর্ষণ পরবর্তী নির্যাতনের লোমহর্ষক সব ঘটনায় আঁতকে উঠছে দেশবাসী। স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ, বান্ধবীর সাথে যুক্তি করে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

একাধিক সংস্থার হিসাবে, গত ছয় বছরে প্রতি বছর গড়ে যতটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, গত ৬ মাসে তা ছাড়িয়ে গেছে। সে হিসেবে ধর্ষণ এখন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। ধর্ষিতাদের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছে, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন হচ্ছে। মিছিলে স্লোগান উঠছে, অপরাধীর ফাঁসি চাই। তবুও থামছে না ভয়াবহ এই অপরাধ। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ধর্ষণসহ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বাদ যায়নি প্রতিবন্ধী কিংবা ছয় বছরের শিশুও। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে, সামাজিক অবক্ষয়, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশ ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতাদের মতে, অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনা নির্যাতিতের পরিবার গোপনের চেষ্টা করে। কিন্তু এরপরও যে তথ্য পাওয়া যায় সেটা ভয়াবহ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে ধর্ষণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। এসব পরিবার সবসময় নানা ধরনের টানাপোড়েনে থাকে। এর সুযোগ নেয় নরপশুরা।

অভিযোগ আছে, যেসব নারী বিচার চাইতে যান তাদের পুলিশ, প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে হেনস্তা হতে হয়।

সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। মানুষের মধ্যে যে আদিম প্রবৃত্তি, তা দমিয়ে রাখতে হলে শৈশব থেকে বা পরবর্তীতে স্কুলকলেজে যথাযথ জ্ঞানচর্চা, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার মধ্যে সাইকোলজিক্যাল একটি ব্যাপারও কাজ করে। কোনো স্থানে একজন করল। তা প্রচার হওয়ার পর দেখা যায়, একনাগাড়ে এখানেওখানে হতেই থাকে। এটা হয়, কারণ যাদের মধ্যে সেই আদিম মনোবৃত্তি দমানো যায়নি, তারা ঘটনার সংবাদটি জেনে উদ্বুদ্ধ হয়।

তিনি আরো বলেন, নিউ ইয়র্ক শহরে প্রচুর খুনের ঘটনা ঘটে। ওই কারণে তারা সেটা সেভাবে প্রকাশ করে না। যখন কেউ ধর্ষণ করে বা হত্যা করে তখন সে আনকনশাস থাকে। অবদমিত প্রবৃত্তি তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনা বাড়তে দিলে তো সামাজিকীকরণ থাকবে না। আইনের কঠোর প্রয়োগ হওয়া উচিত। পাশাপাশি পারিবারিক অনুশাসন ও সামাজিক সম্পর্কটা বাড়াতে হবে।

অনুপম সেন বলেন, আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগটা হচ্ছে না। মূল্যবোধ, আদর্শের অবক্ষয় হচ্ছে। বিকৃত যৌন আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে। সমপ্রতি কয়েকটি ঘটনায় দেখলাম ধর্ষকের ভূমিকায় বিবাহিতরাই। পরিবারে অভিভাবকের শাসনটাও হচ্ছে না, শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যৌন শিক্ষার ধারণা না থাকায় যৌন আগ্রহটা বেশি। ধর্ষণের সময় ধর্ষক মনে করছে আমরা এনজয় করছি। অশিক্ষিত ধর্ষকরা তা অনুসরণ করছে।

সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। ধর্ষক যেই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে আসা অধিকাংশ নারীর বয়স ১৮ বছরের মধ্যে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর বেশিরভাগ সময় ধর্ষণের শিকার ওই নারীর সাথে ধর্ষকের বিয়ে দিয়ে অথবা ভুক্তভোগীর পরিবারকে টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে পড়েও অনেক ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। তারপরও ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে আসা নারীর সংখ্যা বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে কৃষককে জবাই করে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ কিমি সড়কেই পাল্টে যাবে অনেক কিছু