শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে

| শুক্রবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

গতকাল প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ৯টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে চট্টগ্রামের স্থান সপ্তমে। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এবার।

 

আর জিপিএ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭০ জন। হিসেবে পাসের হার ও জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবছরের তুলনায় কমেছে চট্টগ্রামে। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে যে, দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে চট্টগ্রামের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ম।

৮০.৫০ শতাংশ পাসের হারে কেবল দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ বোর্ডের তুলনায় সামান্য এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম। ৮ম অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহ বোর্ডের পাসের হার ৮০.৩২ শতাংশ। আর সর্বশেষ (৯ম) অবস্থানের দিনাজপুর বোর্ডের পাসের হার ৭৯.০৮ শতাংশ।

আজাদীতে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে না পারায় ফলাফলে পিছিয়ে থাকার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বলতে গেলে ইংরেজি বিষয়ে তিন বিভাগের (বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক) শিক্ষার্থীরাই খারাপ করেছেন।

যা সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। ইংরেজি প্রথমপত্রে প্রায় ১০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় পত্রে ১৭ শতাংশেরও বেশি পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইংরেজি ২য় পত্রে ৮২.৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর প্রথম পত্রে পাস করেছে ৯০.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এবারের ব্যাচটি করোনার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত। প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি পড়েছে তাদের ওপর। কেননা, এক বছরের বেশিদিন তারা ঘরবন্দি ছিল। ক্লাসের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে অতিরিক্ত লেখাপড়ার যে সুযোগ সেটা তারা পায়নি। এরপর আবার গত বছরের তুলনায় এবারে বেশি সংখ্যক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাদের। তাই গত বছরের চেয়ে এবারে ‘কোয়ালিটি রেজাল্ট’ কিছুটা কমতেই পারে।

তাঁরা বলেন, গত বছর বিভাগভিত্তিক ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ায় বাংলাইংরেজির মতো বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়নি। সাধারণত ইংরেজি অনেকের কাছে কঠিন বিষয়। এতে বড় একটা অংশ অকৃতকার্য হয়। গত বছর ইংরেজির বাধা না থাকায় পাশের হারও বেশি ছিল।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে অনেক। শিক্ষায় বরাদ্দও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়েছে, যা বর্তমান সরকারের ব্যাপক উদ্যোগ। সরকার নতুন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

এ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অনেক পরিবর্তন আসছে। কিন্তু কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগা অবান্তর নয় যে, সংখ্যা বা পরিমাণে শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে, মানে উন্নয়ন হয়েছে কি না। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ৫ পেলেই শিক্ষার মান বাড়ছে, তা বলা যাবে না। কেননা, দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার খুবই কম।

শিক্ষার মান উন্নয়নে ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ আবশ্যক বলেও মনে করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি পত্রিকান্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পাসের হার বাড়লেই আমরা বলতে পারব না শিক্ষার মান বেড়েছে। এই যে এ বছর এত শিক্ষার্থী জিপিএ৫ পেল তাদের সবার মান তো এক নয়। আর শিক্ষার মান বাড়াতে বাংলাদেশের মানের শিক্ষা নয়, আমাদের প্রয়োজন বিশ্বমানের শিক্ষা।

শিক্ষাবিদরা বলেন, আমরা সবাই সনদমুখী। এ কথা অস্বীকার করতে পারছি না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শিক্ষায় জ্ঞান অর্জনকে মুখ্য বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে হবে। চাকরি বা সনদ অর্জনের জন্য যে শিক্ষা, তা আসলে প্রকৃত শিক্ষা নয়।

আর এ কারণে সমাজে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। আজ সমাজে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ছিনতাই ও লুটপাট বেড়েই চলছে। কারণ ছেলেমেয়েরা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে না। নৈতিক শিক্ষার জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

গুণগত মানোন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবেই তাকে উপেক্ষা করা যাবে না। কারণ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষার আসলে কোনো অর্থ নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানের ক্রমাবনতি রোধ না করতে পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে