৯৫ ভাগ কাজ শেষ, সংযোগ সড়কে চলছে ফিনিশিং ওয়ার্ক

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সিভিল ওয়ার্ক শতভাগ শেষ করে নিরাপত্তা বলয় তৈরি, বৈদ্যুতিক সংযোগসহ খুঁটিনাটি যেসব কাজ আছে তা শেষ করতে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ৬ লেনের টানেল সংযোগ সড়কের অন্তত চার লেনের রাস্তা টানেলের সঙ্গে খুলে দিতে রাত-দিন সমানে চলছে ব্যস্ততা।

ফেব্রুয়ারিতে টানেলের পুরো কাজ সম্পন্ন হবে আশা করা হলেও যানবাহন চলাচলের জন্য কবে খুলে দেওয়া হবে চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে টানেল যাতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া যায় সেরকম প্রস্তুতি চলছে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ জানান, টানেল হবে দুটি টিউবে। টিউবসহ সকল পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়া এ পর্যন্ত সম্পন্ন কাজে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে সেগুলো চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে টানেল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতিও চলছে সমানতালে। টানেলের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত টোল হার গত ২০ ডিসেম্বর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এতে সর্ব নিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায়ের প্রস্তাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। টানেলে দ্বি-চক্র, তিন চাকার যান, গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ বহনকারী গাড়ি ও পায়ে হেঁটে কোনো মানুষ পারাপার হতে পারবে না বলে জানা গেছে।

সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রাইভেটকার, জিপ গাড়ি ও পিকআপকে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসকে ২৫০, ৩১ কিংবা এর চেয়ে কম আসনের বাসকে ৩০০, বত্রিশ কিংবা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসকে ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। পাশাপাশি পাঁচ টনের ট্রাককে ৪০০, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাককে ৫০০, আট থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে।

এদিকে ৬ লেনের টানেল সংযোগ সড়কের মধ্যে ৪ লেন ইতিমধ্যে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত। আর মাত্র ১ কিলোমিটার রাস্তার ফিনিশিং কাজ বাকি। এইটুকু কাজ শেষ হলে টানেল পর্যন্ত পুরো মহাসড়ক প্রস্তুত হয়ে যাবে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকবে। এই সড়কের কাজ শেষ। এখানে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সৈকত সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক টানেলের সাথে যুক্ত করতে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। টানেল পার হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক। এরপর প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়ক যুক্ত হয়েছে ছয় লেনের সড়কে। টানেলের মূল সড়কের কাজ শেষ করে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এখন যত ব্যস্ততা ছয় লেনের সংযোগ সড়ক নিয়ে। ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল সংযোগ সড়কের ছয় লেনের মধ্যে প্রথমে চার লেন খুলে দেওয়া হবে। মূল সড়কের ২১টি কালভার্টেও মধ্যে যে দুটির কাজ অবশিষ্ট ছিল সেগুলোও শেষ পর্যায়ে।

টানেল নির্মাণের আগে ২০১৩ সালে করা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেই হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে, যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

গত ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়েছে। এই উদযাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়লি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীওে গড়ে উঠবে ওয়ান সিটি টু টাউন।

টানেলকে ঘিরে রাজধানীর সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তৈরি হবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ইকোনমিক হাবের সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেল ঘিরে পর্যটন ও শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই মিনিট। সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি অর্থনীতিতে আসবে সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএ বছর ১৫ লাখ লোক বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে : মন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধউৎপাদনে ফিরেছে কর্ণফুলী পেপার মিল