৯শ কোটি টাকার গ্যারান্টিতে ঝুলে আছে প্রকল্প

ছয় মাসের মধ্যে দিতে হবে সমীক্ষা রিপোর্ট মেয়াদ বাড়ল আরও এক বছর

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ জুন, ২০২১ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

৯শ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টির মাঝেই ঝুলে গেছে অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ। একনেকসহ বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন এবং অর্থের সংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের গ্যারান্টির জন্য প্রকল্পটির ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পটির ব্যাপারে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে আগামী ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সিডিএ নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের আবাসন সংকট ঘুচাতে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গত ৬০ বছরে ১২টি আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। এসব আবাসিক এলাকায় ৬৩৬৪টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে করা গড়ে তোলা হয় অনন্যা আবাসিক এলাকা। প্লটের সংখ্যা ছিল ১৪৭৮টি। এরপর গত তের বছরে সিডিএ আর কোনো আবাসিক এলাকা গড়ে তুলতে পারেনি।
২০১৬ সালে ‘অনন্যা আবাসিক (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ নামে নতুন একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি একনেক সভায় ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। নগরীর পাঁচলাইশ, কুয়াইশ ও বাথুয়া মৌজার ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা যায়, পাঁচলাইশ ও কুয়াইশ মৌজার জমির মৌজা ভ্যালু অনেক। এত টাকার তিন গুণ দাম পরিশোধ করে ভূমি হুকুম দখল করে প্লট তৈরি করে তা বরাদ্দ দিতে হলে কাঠাপ্রতি মূল্য ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এত চড়া দামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলে ক্রেতা পাওয়া যাবে না। প্লটের মূল্যের কারণেই প্রকল্পটি নিয়ে আর অগ্রসর হয়নি সিডিএ।
গত বছর মন্ত্রণালয় থেকে আয়বর্ধক প্রকল্প নেওয়ার জন্য সিডিএকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে সিডিএ নতুন করে অনন্যা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা শুরু করে। সিডিএর সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকল্পটি নিয়ে বৈঠক করে ব্যয় কমানোর পথ খুঁজে বের করেন। এতে পাঁচলাইশ ও কুয়াইশ মৌজার ভূমি বাদ দিয়ে হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া ও শিকারপুর মৌজার ভূমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুতে প্রকল্পটিতে ৪১৮.৭৩ একর জায়গায় আবাসিক এলাকা করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা কমিয়ে ২৭৬ একর করা হয়। এর মাঝে ৪০ শতাংশ ভূমি রাস্তা, লেক, খেলার মাঠ এবং সবুজায়নসহ নানা কাজে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট করে ৬০ শতাংশ ভূমির উপর বিভিন্ন সাইজের ২ হাজার আবাসিক প্লট এবং ২০টি বড় সাইজের কমার্শিয়াল প্লট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯শ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংক ঋণের টাকা নিয়ে ভূমির মূল্য পরিশোধসহ প্রাথমিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্লট বরাদ্দ দেওয়ার মাধ্যমে টাকা তুলে ব্যাংকের ঋণ শোধ করার পরিকল্পনা করা হয়।
বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া এবং পুরো আর্থিক প্রক্রিয়াটির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের গ্যারান্টি দরকার। এই গ্যারান্টির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গ্যারান্টি না দিয়ে শহর থেকে দূরে আবাসিক এলাকা করা হলে সেখানে প্লট বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সিডিএর বিনিয়োগকৃত টাকা সময়মতো উঠে আসবে কিনা, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, অর্থ মন্ত্রণালয় গ্যারান্টি না দিলে কোনো ব্যাংক ঋণ দেবে না। অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংক থেকে অর্থায়নের ব্যাপারটি সিডিএ নিশ্চিত করে। তবে মন্ত্রণালয়ের গ্যারান্টি না পাওয়ায় পুরো প্রকল্পটি ঝুলে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গ্যারান্টি দেওয়ার প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়ে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে ছয় মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পত্র পাওয়ার পর সিডিএ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টকে (ডিপিএম) নিয়োগ দেয়। তারা প্রকল্পটির ব্যাপারে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট প্রদান করবে। এই রিপোর্টের ওপরই মন্ত্রণালয়ের গ্যারান্টি এবং প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ভূমি হুকুম দখল করতে মৌজা ভ্যালুর তিন গুণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এতে ভূমির ক্রয় মূল্য অনেক বেশি পড়ে। সেই ভূমিতে রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বসবাসের উপযোগী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলে প্লট করতে বহু টাকা খরচ হয়। এত চড়া দামে মানুষ সেই প্লট কিনবে কিনা সেটিই মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, প্লটের মূল্যটাই মূল সমস্যা। তিন গুণ দামে ভূমি হুকুম দখল করে প্লট বিক্রি আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটিই খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সংকট আরো প্রকট হয়েছে। করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে। অনেকের হাতে টাকা নেই। প্লট ক্রেতাদের একটি বড় অংশ প্রবাসী। যাদের অনেকেই করোনার জন্য চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন। এই অবস্থায় প্লট তৈরি করা হলেও সেগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে মন্ত্রণালয় থেকে তা অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ টিমের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করা হবে। এই রিপোর্টের ওপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের গ্যারান্টির বিষয়টি নির্ভর করবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গ্যারান্টি পাওয়া গেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। না হয় বাতিল করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ