উদ্বোধনের প্রায় আট বছরেও চালু হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রদের জন্য নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। চরম আবাসিক সংকটের মধ্যেও প্রশাসনের উদাসীনতায় হলটিতে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রে সংযুক্তি দেওয়া হলেও আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হল বেশ ঘটা করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অপরদিকে বর্তমানে চালু হলগুলোতে আধুনিক সুযোগ–সুবিধার অভাব, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পর্যাপ্ত হল না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের চড়া মূল্যে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজগুলোতে কিংবা শহরে। পানি, বিদ্যুতের সমস্যাসহ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের এসব কটেজে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগছেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি দ্রুত চালু করা হোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলটি। এতে কিছুটা হলেও ভোগান্তি লাঘব হবে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। চালুর পাশাপাশি আসন বরাদ্দের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, গত ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ছাত্রদের জন্য ১৮৬ আসন বিশিষ্ট প্রায় ৪৫ হাজার বর্গফুটের দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করা হয়। হলটিতে দুটি লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগার, ৫০ কেভি পাওয়ারের জেনারেটর, ক্যান্টিন, প্রার্থনা কক্ষ, ইনডোর গেম, কমন রুম, ইউনিয়ন রুম, টিভি রুম, ওয়েটিং রুম, প্রভোস্ট রুম, আবাসিক শিক্ষকদের রুম, লন্ড্রি, দোকানসহ রয়েছে সব আধুনিক সুযোগ–সুবিধা। ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ না দিয়ে দেড় বছর পর ২০১৭ সালের মে থেকে হলটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ১৮৬ আসন বিশিষ্ট দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলকে ৭৩৮ আসন বিশিষ্ট ছয় তলা ভবন করা হয়। ফলে এর মোট আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজার ৮৪৮ বর্গ মিটার। যার নির্মাণ ব্যয় হয় ৩৩ কোটি ১৪ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা।
বঙ্গবন্ধু হল চালু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমানে আমরা হলে থেকেও মানবেতর জীবন–যাপন করছি। বর্তমান হলগুলো অনেক পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আতঙ্কের সাথে বসবাস করতে হচ্ছে। হলে আলাদা রিডিং রুম থাকলেও সেখানে পড়াশোনা করার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এছাড়াও আবাসিক হলগুলোতে আধুনিক সুযোগ–সুবিধার অভাব, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাই আধুনিক সুযোগ–সুবিধা সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলটি চালু করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
দ্বিতীয় দফার কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর ফজল আজাদীকে বলেন, বর্ধিত সময়ে কাজ চলছে এখন। তাদের এপ্রিল পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। চাইলে তারা এর আগেই কাজ শেষ করতে পারবে। এক মাসের কাজও নাই। তারা কাজ শেষ করে দিলেই হলটি ব্যবহার উপযোগী হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বলেন, হলটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর কাজটি দেখভাল করছে।
শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, আসন বরাদ্দ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আগে থেকেই আছে। সুবিধাজনক যেকোনো বন্ধের মধ্যে আমরা এটা করে ফেলবো। সেটা শীঘ্রই হবে আশা করি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র–ছাত্রী মিলে ১৩টি হলে মাত্র ৫ হাজার ৭ শত ৮৫টি আসনসংখ্যা রয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।