খাশোগি খুনের ঘটনায় সৌদি আরবের সাবেক এক কর্মকর্তা ও রাজকীয় একটি বাহিনীর ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশটির নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুবরাজের ওপর এমন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। সৌদি আরব এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে এটি ‘নেতিবাচক, মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য’। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ, যিনি কার্যত দেশটির শাসক, তিনিও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। খাশোগি হত্যাকাণ্ডে ৭৬ নাগরিকের ওপরের নিষেধাজ্ঞা দিলেও সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে যেন কাজের সম্পর্ক বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতেই তার ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন, ফাটল ধরানো নয়। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় বাইডেন সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন; তারই ধারাবাহিকতায় খাশোগি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সৌদি নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞার এসব পদক্ষেপ এল বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের। বাইডেনের আগের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ সৌদি আরবের একের পর এক মানবাধিকার লংঘনকে ছাড় দিয়ে গিয়েছিল বলে সমালোচকরা অভিযোগ করে আসছেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় খাশোগি খুনের ঘটনায় সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরি এবং সৌদি রয়েল গার্ডস র্যাপিড ইন্টারভেনশন ফোর্সের (রিফ) ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। খাশুগজি হত্যাকাণ্ডে রিফের ভূমিকার বিষয়টি সমপ্রতি প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসেছে। খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যায় জড়িতদের অবশ্যই জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে, বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন। যুক্তরাষ্ট্র পরে ৭৬ সৌদি নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞাও জারি করে। সীমানার বাইরে সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দেশগুলোকে শায়েস্তা করতে বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া নতুন নীতির আওতায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেবল যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তারাই নন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও এই বিধিনিষেধের প্রয়োগ দেখা যেতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
খাশোগি যখন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন তখনই তাকে হত্যা করে তার দেহ খণ্ড বিখণ্ড করা হয়। ৫৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক এক সময় সৌদি সরকারের উপদেষ্টা এবং রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে এক পর্যায়ে তিনি সব আনুকূল্য হারান এবং ২০১৭ সালে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে চলে যান। সেখান থেকে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে একটি মাসিক কলাম লিখতেন, যেখানে তিনি যুবরাজ মোহাম্মদের নীতির সমালোচনা করেন।