চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একাডেমিক কাউন্সিলের নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী–বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘হলুদ’ দল তিন অংশে বিভক্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন না হওয়ার দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দলটি। যা প্রশাসনপন্থী শিক্ষক ও প্রশাসনবিরোধী হিসেবেও ক্যাম্পাসে পরিচিত। গত কয়েকটি নির্বাচনে দুই পক্ষ আলাদা আলাদা প্যানেল দিতে দেখা গেছে। আসন্ন একাডেমিক কাউন্সিল
নির্বাচনে আরও একটি পক্ষ পুরো প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তারা সবাই নিজেদের ‘হলুদ দল’ হিসেবে দাবি করছেন। তবে এ নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না জামায়াত–বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। দলীয়করণ করে শিক্ষক নিয়োগ চলমান থাকার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তারা। ফলে হলুদ দলের শিক্ষকরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ বলেন, রবিবার (আজ) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ছয় পদের বিপরীতে ১৮ জন শিক্ষক মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে ২ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিলো। তিনি বলেন, রবিবার সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা পদাধিকার বলে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। এর বাইরে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদ থেকে দুইজন করে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। ৬ পদের বিপরীতে তিন অংশ থেকে প্রার্থী হয়েছেন ১৮ জন শিক্ষক।
আওয়ামী শিক্ষকদের সংগঠনের মধ্যে তিন অংশের মধ্যে একটি হচ্ছে মূল হলুদ দল। যদিও এই মূল হলুদ দলকে অবৈধ বলে দাবি করছেন অন্য দুটি প্যানেল। এছাড়া হলুদ দলের প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের একটি প্যানেলের ৬ শিক্ষকও নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থী হয়েছেন। তবে প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল মানতে নারাজ এই প্যানেলটি। তৃতীয় অংশটি হচ্ছে প্রশাসন থেকে পদত্যাগকারী শিক্ষকদের প্যানেল। এই ৩ অংশই নিজেদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ তথা হলুদ দল বলে দাবি করে আসছেন। ছয় পদের বিপরীতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী হয়েছেন ১৮ জন। এরা হচ্ছেন সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরি নির্বাচনে মূল হলুদ দলের প্যানেল থেকে ওশানোগ্রাফি বিভাগের মো. এনামুল হক ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ড. তাপস কুমার ভৌমিক। প্রশাসনপন্থী হলুদ প্যানেল থেকে ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চের নাসিমা পারভীন ও ফার্মেসি বিভাগের এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন। এছাড়া প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করা শিক্ষকদের হলুদ প্যানেল থেকে আরবি বিভাগের ড. মুহাম্মদ নুর হোসাইন ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. রামেন্দু পারিয়াল।
সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে হলুদ দল থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আবদুল্লাহ আল মামুন ও নৃ–বিজ্ঞান বিভাগের তনিমা সুলতানা, প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের পক্ষে থেকে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের উম্মে হাবিবা ও ওশানোগ্রাফি বিভাগের মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সরকার এবং প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের মুহাম্মদ ওবায়দুল কবির ও ফার্মেসি বিভাগের রমিজ আহমেদ সুলতানকে প্রার্থী করা হয়েছে।
প্রভাষক ক্যাটাগরিতে হলুদ দল থেকে লোকপ্রশাসন বিভাগের নওশীন ইসলাম ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের হাসনাইন ইস্তেফাজ, প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জান্নাতুল নাঈম ও ইলেকট্রনিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তাহসিন আহমেদ ফাহিম এবং প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অর্থনীতি বিভাগের কাজী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ও ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শারমিন জামালকে প্রার্থী করা হয়েছে।