৬ ঘণ্টা মহাসড়ক অচল, সীমাহীন দুর্ভোগ

অবৈধ বসতি উচ্ছেদের প্রতিবাদে জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর। ২৫ কিলোমিটার যানজট, লাঠিচার্জ টিয়ারশেল

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ২৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় দেওয়া এবং অবৈধ বসতি উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করার দাবিতে ভূমিদস্যু ও অবৈধ দখলদারদের সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের বাসিন্দারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে। ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়কের বিআইটিআইডি হাসপাতালে গেট এলাকায় গতকাল দুপুর ১২টা থেকে অবরোধ করে। মহাসড়কে অবরোধের ফলে রাস্তার উভয় পাশে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট হয়। যানজটে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত পরিবহনের যাত্রীরা। অবরোধ চলাকালে আলীনগর ও জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবরোধকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে অবরোধকারীরা জঙ্গল সলিমপুরের দিকে পালিয়ে যায়। এর পরপরই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে যান চলাচল শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডির সামনে মহাসড়কের বাইপাস অংশে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সড়ক অবরোধ করে জঙ্গল সলিমপুরের দেড় হাজার নারী-পুরুষ। মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) আশরাফুল করিম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম ও সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত হন।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও তারা অনড় ছিল। এমনকি প্রশাসনের লোকজনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভকারীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। তারা প্রশাসনের সকল অনুরোধ উপেক্ষা করে সড়কেই অবস্থান করে। অবরোধকারীদের কেউ কেউ ঝাড়ু ও লাঠি হাতে অবস্থান নেয়। এ সময় প্রশাসন ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান করতে থাকে।
এদিকে অবরোধের ফলে বাঁশবাড়িয়া থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স, বাস-মিনিবাস, কাভার্ডভ্যান, লরিসহ শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়ে অসুস্থ রোগী ও শহরমুখী নারী-শিশু যাত্রীরা।
যানজটে আটকা পড়া কয়েকজন যাত্রী বলেন, যানজটে ৪ ঘণ্টা এক স্থানে আটকে আছি। একটি গাড়িও নড়ছে না। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়।
জানা যায়, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। কারাগার স্থানান্তরসহ সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই অভিযান। এক মাস আগে অভিযানে ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইয়াসিনের টর্চার সেলসহ দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি আলীনগরের অবৈধ বাসিন্দাদের পানির লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তবে প্রথম দিনে উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। উচ্ছেদে বাধা দেয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করে।
বিক্ষুব্ধরা জানান, এক মাস আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে তারা সারা দিন পরিশ্রম করে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকটে কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রশাসন তাদের এখান থেকে সরে যেতে বলে। অন্য কোথাও জমি কিনে বসতি গড়ার সামর্থ্য তাদের নেই। তাই তারা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
অবরোধকারীদের একজন মোহাম্মদ আবদুর রহিম বলেন, জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরে প্রায় ২০-২৫ হাজার লোক বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। সরকার ওই এলাকায় যে উচ্ছেদ অভিযান করছে তা বন্ধ করতে হবে। অবৈধভাবে বসতিদের ঘরে বিচ্ছিন্ন করা বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় দিতে হবে।
জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দা রোকসানা আক্তার বলেন, আমাদের এখানে নাগরিকত্ব দিয়ে ভোটার করেছে। আমরা এখানে বসবাস করছি।
দিনভর সড়ক আটকে রাখার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অবরোধকারীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। এ সময় অবরোধকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তারা ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়কের ট্রাফিক পুলিশ বঙ ভাঙচুর করে। এ সময় মহাসড়কে থাকা অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ ব্যাপক লাটিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ধাওয়া করলে অবরোধকারীরা বায়েজিদ লিংক রোড হয়ে জঙ্গল সলিমপুরের দিকে পালিয়ে যায। এর পরপরই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশের যান চলাচল শুরু হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম জানান, জঙ্গল সলিমপুরের বিদ্যুতের সংযোগ তারা বিচ্ছিন্ন করেননি। দেশে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অন্যান্য এলাকার মতো সেখানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত রয়েছে। ওই এলাকায় সরকারি পাহাড় কেটে যে বসতি গড়ে উঠেছে সেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তবে ভূমিহীন ও অসহায়দের পুনর্বাসন করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম বলেন, বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে জঙ্গল সলিমপুরের বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করলেও মহাসড়ক থেকে সরে যায়নি। পরে ‘বল প্রয়োগ’ করলে চলে যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আন্দোলনকারীরা বিদ্যুতের দাবিতে বায়েজিদ সড়কে আন্দোলন করছিল। কিন্তু কারো প্ররোচনায় হঠাৎ করে ফৌজদারহাট মহাসড়কে এসে অবস্থান নেয়। এতে দীর্ঘ যানজটের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশি অ্যাকশনের পর তারা সরে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধকালো টাকা সাদা করার সুযোগ : অসফল একটি প্রয়াস