৬০ বছর ধরে পরিত্যক্ত রাখা জমি ফেরত চায় ক্ষতিগ্রস্তরা

ফতেয়াবাদে মানববন্ধন

হাটহাজারী প্রতিনিধি | রবিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে ৬০ বছর পূর্বে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা ৭৫ একর পূর্ব-পুরুষের জমি ফেরত পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ‘ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক সমিতি’। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় প্রকল্প এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়। সমিতির আহ্বায়ক কাজী এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এলাকার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৯৬২-৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তৎকালীন সামরিক সরকারের পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এল এ ২৫৬/১ নম্বর মামলা মূলে হাটহাজারী দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার ৫০ একর এবং এল এ ২৫৬/২ মামলা মূলে চিকনদন্ডী মৌজার ২৫ একর ধানী নাল জমি অধিগ্রহণ করে মালিকদের নামমাত্র ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। যেহেতু ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হয়নি সেহেতু আইনমতে উক্ত ভূমির চূড়ান্ত অধিগ্রহণ হয়নি। এ সংক্রান্ত জেলা প্রশাসন কোনো গেজেটও প্রকাশ করেনি। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে বা গেজেট প্রকাশ না করে জেলা প্রশাসন অন্য কোনো প্রত্যাশী সংস্থার কাছে উক্ত জমি আইনত হস্তান্তর করতে পারে না। ওয়াসা তড়িঘড়ি করে দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার হুকুম দখলীয় ৫০ একর আন্দরে ১০ একর জমিতে কৃত্রিম বালির পাহাড়সহ একটা গোডাউন এবং চিকনদন্ডী মৌজার হকুম দখলীয় ২৫ একর জমির আন্দর ১২ একর ভূমিতে দুটি জলাধার খনন করে। ১৯৬৪ সালে কর্তৃপক্ষ ফতেয়াবাদ এলাকায় উল্লেখিত প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করে চট্টগ্রাম নগরের মোহরা এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করে আলোচ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এরপর ফতেয়াবাদে পরিত্যক্ত প্রকল্পের জমি অবমুক্তের জন্য তৎকালীন ভূমিমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা। এরপর থেকে ভূমি মালিকরা নিজেদের জমিজমা ভোগদখলে নিয়ে চাষাবাদ, বৃক্ষাদি রোপণ করে আসছে। এছাড়া অধিগ্রহণ করা ৭৫ একর জমি ওয়াসা বা জেলা প্রশাসনের দখলেও নেই।

মানববন্ধনে ১২ নম্বর চিকনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান বাচ্চু বলেন, অধিগ্রহণ করা ৭৫ একর জমিতে বিগত ৬০ বছর কিছুই করতে পারেনি ওয়াসা। এই জমি ফতেয়াবাদে নিঃস্ব হওয়া হাজার পরিবারের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। চট্টগ্রাম ওয়াসাকে এই জমি ফেরত দিতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা- দেশের এক ইঞ্চি জমিও পরিত্যক্ত রাখা যাবে না। চাষাবাদযোগ্য জমিতে কোনো শিল্পকারখানা বা প্রকল্প নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ জমি ফেরত চাই। প্রয়োজনে ওয়াসার বিরুদ্ধে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এলাকার কৃষক মো. লোকমান বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা বাপ-দাদার জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবনধারণ করে আসছি। প্রকল্পের নাম দিয়ে আমাদের বাপ-দাদার জমি জমা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কৃষক মো. ইদ্রিস বলেন, পৈত্রিক এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কিছু দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলব।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক সমিতির আহ্বায়ক কাজী এনামুল হক, ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক আব্দুর রহমান, কাজী মহসিন, ফতেয়াবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলী নাসের চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন, ইউসুফ খান, মোহাম্মদ আলমগীর, সাংবাদিক মোহাম্মদ রফিক, মাসুদুর রহমান, জিন্নাত আলী বাদশা, কমিটির সদস্য সচিব রায়হান মাহমুদ, সালাউদ্দিন মিন্টু, আলমগীর কবির চৌধুরী প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ মিনিট ব্ল্যাক আউট ছিল চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধলন্ডনে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ও লায়ন কামরুন মালেককে সংবর্ধনা