বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে মোবাইল ফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি) পরিবর্তন করে তারা মাত্র ৫ সেকেন্ডে। চোরাই ও ছিনতাই করা মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে পুনরায় বিক্রি করে দেয়। কখনো আবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। চক্রটি তিন ধাপে মোবাইল চুরি, আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন ও চোরাই মোবাইল আবার মার্কেটে বিক্রির কাজ সম্পন্ন করতো। গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাতে নগরীর রিয়াজউদ্দীন বাজার, রেলস্টেশন ও দেওয়ান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫৬টি চোরাই মোবাইল, ৭টি ল্যাপটপ, আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ৮টি ডিভাইস, ২টি ফ্লাশিং ডিভাইস উদ্ধার করেছে ডিবি উত্তর বিভাগ। গ্রেপ্তার ৬ জন ৪ বছর ধরে এ কাজ করছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। সিএমপি মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. খোরশেদ আলম (৩২), মো. কামাল (৩২), মো. সুরুজ মিয়া (৩২), জয় চৌধুরী (২৫), মো. বাবু (৩২) ও মো. তানভীর হাসান (২৫)।
উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন থেকে খোরশেদ ও কামালকে ৪টি মোবাইলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে খোরশেদ ও কামালের তথ্যের ভিত্তিতে রিয়াজউদ্দীন বাজার আব্দুল লতিফ মার্কেটের ষষ্ঠ তলা থেকে সুরুজ মিয়া, জয় চৌধুরী, মো.বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। খোরশেদ ও কামাল চোরাই মোবাইল সুরুজ মিয়া, জয় চৌধুরী ও বাবুর কাছে বিক্রি করতেন। আব্দুল লতিফ মার্কেটের ষষ্ঠ তলার ১৫৪ নম্বর রুম থেকে ১৬টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়। চোরাই মোবাইলগুলো আব্দুল লতিফ মার্কেট থেকে চলে যায় দেওয়ান বাজারে। সেখান থেকে আইএমইআই পরিবর্তন করে সেগুলো
আবার বিক্রির জন্য বিভিন্ন মার্কেটে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে সুরুজ, জয় ও বাবু।
তিনি আরও বলেন, চোরাই মোবাইল কিনে সেগুলো দেওয়ান বাজারে তানভীর হাসানের কাছে পাঠানো হতো। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিত তানভীর হাসান। নগরীর দেওয়ান বাজার এলাকায় তার বাস। চোরাই মোবাইলসমূহের আইএমইআই পরিবর্তনে সিদ্ধহস্ত তিনি। আইএমইআই পরিবর্তন করে মোবাইলসমূহ মার্কেটে বিক্রি হয়। তার এই কাজে সহযোগিতা করে সুরুজ, জয় ও বাবু।
তানভীরের কাছ থেকে ১৩৬টি মোবাইল, আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ৮টি ডিভাইস, ২টি ফ্লাশিং ডিভাইস ও ৭টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। মোবাইলই শুধু নয়, ল্যাপটপের সিরিয়াল নম্বরও সে পাল্টে ফেলতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদে তানভীর জানায়, নগরীর একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করেছে ও নগরীর একটি কলেজের বিএসসির শিক্ষার্থী।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ছিনতাইকৃত বা চোরাই মোবাইল কিনে আইএমইআই পরিবর্তন করে নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে আসছিল চক্রটি। অভিযানের সময় আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ করছিলেন তানভীর। তার বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ল্যাপটপ ওপেন থাকলে মাত্র ৫ সেকেন্ডেই সিরিয়াল নম্বর পরিবর্তন করে ফেলেন। যদি ল্যাপটপ ওপেন না থাকে তাহলে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। এ ছাড়া যেকোনও এ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের পাশাপাশি লকও খুলতে পারেন। তিনি গত ৪ বছর যাবত আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ করে আসছেন। মাঝখানে কিছুদিন আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ বন্ধ রেখেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে। পুনরায় টাকার লোভে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। আলী হোসেন জানান, অনেকগুলো মোবাইল আছে যেগুলোর আইএমইআই নম্বর চেঞ্জ করার আগেই আমরা জব্দ করেছি। সেগুলো সহজেই মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া যাবে। যদি প্রকৃত মালিক পাওয়া যায়।