জেলিফিশে সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা

অপ্রচলিত খাদ্য হিসাবে রপ্তানি বা ওষুধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা যায় বিশ্বে ৩৬২ বিলিয়ন ডলারের বাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরে সাম্প্রতিককালে জেলিফিশ বৃদ্ধির ঘটনা নিয়ে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। জেলিফিশে উচ্চ মাত্রার পুষ্টিগুণ ও ওষুধি গুণ থাকায় একে অপ্রচলিত খাদ্য হিসাবে বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি ওষুধ শিল্পেও কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা যায়। বিশ্বে প্রায় ৩৬২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার রয়েছে জেলিফিশের। এ কারণে বিএফআরআইয়ের কক্সবাজারে অবস্থিত সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জেলিফিশকে কাজে লাগাতে গবেষণা করবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রটির প্রধান ড. মোহাম্মদ শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে জেলিফিশ খুব অপরিচিত হলেও বিশ্বে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ভ্রু কুচকে দেয়ার মতো। বিশ্বে প্রায় ৩৬২ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ লাখ কোটি টাকার বাজার রয়েছে এই জেলিফিশের। ড. শফিক জানান, এশিয়া অঞ্চলে খাওয়ার উপযোগী ১১ প্রজাতির জেলিফিশ শনাক্ত হয়েছে। ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে জেলিফিশ বেশ জনপ্রিয় খাবার। তবে জেলিফিশ খাওয়ার আগে সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, জেলিফিশ খুব দ্রুত পঁচে যায়, যে কারণে একে দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করতে হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, জেলিফিশের মূল্যবান ওষুধি গুণও রয়েছে। রক্তচাপ, হাড়ের ব্যথা, আথ্রাইটিস, আলসার ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় জেলিফিশ উপকারী বলে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া জেলিফিশে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পিইউফা নামে এক প্রকার পলি আন স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে, যা স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী।
তিনি বলেন, ভিয়েতনামে একেকজন জেলে জেলিফিশ ধরে দিনে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করে। সম্ভাবনাময় এই অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদের অনাকাক্সিখত মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র।
চলতি মাসের শুরুতে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে আসে প্রায় অর্ধশত জেলিফিশের মৃতদেহ, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘নুইন্যা’ বলা হয়। কিন্তু কী কারণে হঠাৎ করে এত মরা জেলিফিশ ভেসে এলো তা নিয়ে বিএফআরআই’র পাশাপাশি বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের একদল গবেষকও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ওই ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
তিনি বলেন, একটি ইকোসিস্টেমস বা বাস্তুসংস্থানতন্ত্রে জেলিফিশ বেড়ে যাওয়ার কারণ ও এর প্রতিকার নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গবেষকদের মতো বাংলাদেশ সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একদল গবেষকও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। মানব ক্রিয়াকলাপের কারণে অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির মুখোমুখি হলেও জেলিফিশ তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। কৃষ্ণ সাগরে, নামিবিয়ার উপকূলে এবং জাপান সাগরসহ বিশ্বজুড়ে এমনকি আমাদের পাশ্ববর্তী ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের কেরালা, তামিলনাড়ুতে জেলিফিশ ব্লুমের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জেলিফিশের জনসংখ্যা গত দুই দশকে অনেক বেড়েছে এবং এটি এখন সমুদ্র সৈকত বন্ধ হওয়া এবং এমনকি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্যও দায়ী হয়ে উঠেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫ সেকেন্ডেই মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষা ও চিকিৎসা পেলে অটিস্টিক শিশুরাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে