চা শ্রমিকদের মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠকে। একই সঙ্গে বাড়তি চা পাতা তোলা, উৎসব বোনাসসহ শ্রমিকদের আনুপাতিক হারে অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা বাড়ানোর বিষয়েও সম্মতি দিয়েছেন চা বাগান মালিকরা। গতকাল শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন গেটে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এদিকে নতুন নির্ধারিত ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরিতে খুশি চা শ্রমিকরা। এ কারণে তারা আজ রোববার থেকে কাজে ফিরবেন। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন দাস এই তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চা শ্রমিকরা ১৯ দিন ধরে ধর্মঘটসহ আন্দোলন করছেন। এরমধ্যে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বিটিএ নেতাদের সঙ্গে শনিবার বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; যেটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। চা শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান রয়েছে মন্তব্য করে আহমদ কায়কাউস জানান, বৈঠকে ১৩টি চা বাগানের মালিক উপস্থিত ছিলেন।
শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে মুখ্য সচিব জানান, নতুন এ মজুরির পাশাপাশি প্লাকিং বোনাস (অতিরিক্ত চা পাতা তোলার অর্থ), মাঠ কারখানার অধিকার আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি ও বেতনসহ উৎসব ছুটি সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। অসুস্থতা ছুটি বাড়ানো হবে। ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা আনুপাতিক হারে বাড়বে। কাজে অনুপস্থিতি অনুযায়ী উৎসব ভাতা বাড়বে, মোট প্রদত্ত চাঁদার ৫ শতাংশ প্রশাসনিক খরচ সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে।
বাগান মালিকরা রেশন ২৮ টাকায় কিনে এখন ২ টাকায় শ্রমিকদের দেয় জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, ভর্তুকি মূল্যে রেশন সুবিধা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন, চান শ্রমিকদের পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ, গো চারণভূমি চৌকিদারি বাবদ ব্যয়, বিনা মূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি এবং বাসাবাড়িতে উৎপাদন বাবদ আয় বাড়বে জানান তিনি। এসব কিছু মিলিয়ে মজুরি সাড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার মত দৈনিক পড়বে। এটা প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বলেন মুখ্য সচিব।
শ্রমিকদের আজ কাজে ফেরার ব্যাপারে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নৃপেন দাস বলেন, কিছু কিছু চা বাগানে রোববার থেকেই শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। দেশের নিবন্ধিত ১৮৭টি বাগানসহ আমাদের বাগান পঞ্চায়েত কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত ফাঁড়ি বাগানসহ মোট ২৩২টি বাগানের কিছু কিছু বাগানে রোববার থেকেই শ্রমিকরা হয়তো কাজে যাবেন।
বেতন ভাড়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভাড়াউড়া বাগানের নারী চা শ্রমিক লক্ষ্মীগড় আঞ্চলিক নৃ-ভাষায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমরার মাই-বাবা। তার মতামতের ওপর কোনো কথা আমরার নাই আছে। আমরা বহুত খুশি আছি। চা বাগানের সর্দার জয় নায়ায়ন জেনা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের অনেক দিন কাজ বন্ধ গেছে। রোববার চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি। এখন যদি বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের বলে যে, তোমরা ক্যাশ প্লাকিং (নগদে পাতা উত্তোলন) করো, তবে আমরা কাজে যোগ দেব। ১২০ টাকা দৈনিক মজুরিতে ক্যাশ প্লাকিং ছিল কেজি প্রতি ৪ টাকা ৫০ পঞ্চাশ পয়সা। এখন তো ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারিত হলো। এখন ক্যাশ প্লাকিং কেজি প্রতি কত পড়বে তা আগে নির্ধারিত হোক।
ফুলছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি জগৎবন্ধু রায় ঘাটোয়াল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে আমরা আনন্দিত। আমরা রোববার বন্ধের দিনেও কাজে যেতে চাই। তবে এজন্য আমাদের চা বাগানের বড় সাহেবের (ম্যানেজার) অনুমতির প্রয়োজন।