বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে (এসএওসিএল) ৫০ কোটি টাকার এফডিআর নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেখে নির্ধারিত সময়ের মাত্র ৯ দিন আগে এফডিআর ভাঙিয়ে প্রায় ৯৪ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে কোম্পানি উপ-ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হক তুষারের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখায় ২৫ কোটি টাকা করে ৫০ কোটি টাকার দুটি এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করে এসএওসিএল। গত ২৭ জুলাই করা তিনমাস মেয়াদী এফডিআর দুটি ২৭ অক্টোবর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। তিন মাসে সাড়ে ৭ শতাংশ হিসেবে ৯৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মুনাফা পেতো এসএওসিএল। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার মাত্র ৯দিন আগে ১৮ অক্টোবর এফডিআর দুটি নগদায়ন করে নেয় কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক (হিসাব) মাহমুদুল হক তুষার। এফডিআর দুটি ভাঙানোর ক্ষেত্রে কারো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। এনিয়ে তোলপাড় শুরু হলে গত ২১ অক্টোবর কোম্পানির সচিব ও প্লান্ট ম্যানেজার ছিদ্দিকুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল এন্ড অপারেশন) প্রকৌশলী মো. মোকারম হোসেন এবং সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) প্রকৌশলী প্রলয় চক্রবর্তী যৌথভাবে বিষয়টি এসএওসিএলর প্রধান নির্বাহী ও পরিচালক শহীদুল আলমকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। চিঠিতে কোম্পানির ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রধান নির্বাহী অভিযোগটির বিষয়ে সরসরি পদক্ষেপ না নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য চিঠিটি পরিচালনা পর্ষদে প্রেরণ করেন।
লিখিত অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল এন্ড অপারেশন) প্রকৌশলী মো. মোকারম হোসেন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এফডিআর দুটি ভাঙানো হয়েছে নির্ধারিত সময়ে কয়েকদিন আগে। এতে প্রতিষ্ঠানের বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে প্রধান নির্বাহীকে জানানো হয়েছে।’
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখার এভিপি (এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট) আবু নাছের হলেন এসএওসিএলর উপ-ব্যবস্থাপক (হিসাব) মাহমুদুল হক তুষারের ভগ্নিপতি। বিষয়টি কোম্পানি সচিব ও প্লান্ট ম্যানেজার মো. ছিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে জানতে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসএওসিএলর এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘এফডিআর করা ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা হলেন আমাদের ডেপুটি ম্যানেজার তুষারের ভগ্নিপতি। ভগ্নিপতির সাথে যোগসাজশ করে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার মাত্র ৯দিন আগে এফডিআর দুটি ভাঙানো হয়েছে। এতে ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মুনাফা বঞ্চিত হলেও উল্টো দুই এফডিআরের বিপরীতে ব্যাংক ৮০ হাজার টাকা এঙাইজ ডিউটি হিসেবে কর্তন করে রাখে। এতে এসএওসিএল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্যক্তিগতভাবে তারা লাভবান হয়েছেন।’
গতকাল বিকেলে বিপিসি চেয়ারম্যানের দপ্তরে আলাপকালে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসএওসিএলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালনকারী বিপিসির পরিচালক শহীদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘অনুমোদনহীনভাবে এফডিআর নগদায়ন করার অভিযোগটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে দেওয়া চিঠিটি পরিচালনা পর্ষদে প্রেরণ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে উপ-ব্যবস্থাপক (হিসাব) মাহমুদুল হক তুষারের ব্যক্তিগত দুটি মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।