৪১ দেওয়ানি আদালতে ১ লাখ ১৩ হাজার মামলা

অর্ধেকের বেশি চৌকি আদালতের ঝুলে থাকে আট কারণে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ মার্চ, ২০২২ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের নগর ও গ্রামের দেওয়ানি মামলার বিচারের জন্য নির্দিষ্ট আদালত রয়েছে ৪১টি। ৪১ আদালতে বর্তমানে (২০২১ সাল শেষে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী) মামলা রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২১টি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৬৫ হাজার ১৯৯টি মামলা হচ্ছে পটিয়া, বাঁশখালীসহ ৭ উপজেলার ২১ চৌকি আদালতের।
আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে দেওয়ানি আদালতের মামলা শেষ হয় না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের বছর ধরে ঝুলে থাকে এসব মামলা। এর মধ্যে ৮টি কারণকে উল্লেখযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যেমন সমন ও নোটিশ জারিতে বিলম্ব। যেভাবে সমন ও নোটিশ জারি করা হয় তাতে মান্ধাতা আমলের পন্থা অনুসরণ করা হয়। নিয়মিত বিচারক না থাকাও মামলা জটের অন্যতম কারণ। দেখা যায়, কিছুদিন পরপর খালি হয়ে পড়ে আদালত। এরপর রয়েছে মামলার তুলনায় বিচারক ও আদালতের সংখ্যা কম, মামলার পক্ষগুলোর মামলা দীর্ঘায়িত করার কৌশল (সময়ের আবেদন করতেই থাকে, কখনো বাদী, কখনো বিবাদী, কখনো রাষ্ট্রপক্ষ), সাক্ষী ও ডকুমেন্ট হাজির করতে বিলম্ব, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর অপ্রতুলতা, আধুনিকায়ন না হওয়া (নথি খুঁজে পাওয়া যায় না), আইনজীবী, বিচারক, সাক্ষী ও কোর্ট স্টাফদের মধ্যে সমন্বয় ও দক্ষতার অভাব। সর্বোপরি লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে বছরের পর বছর দেওয়ানি আদালতের মামলা ঝুলে থাকে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সাল শেষে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ৪১ দেওয়ানি আদালতের মামলার সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২১টি। এর মধ্যে জেলা জজ আদালতে ২২২১টি, ১ম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ২৬৯টি, ২য় অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ৩৮৮টি, ৩য় অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ৪৪৩টি, ৪র্থ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ৫৫৯টি, ৫ম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ৪৬২টি, ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ৩১৩টি, ৭ম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ৩০২টি, দেওলিয়া আদালতে ২৭৮টি, ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৪২৭৩টি, ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৩৮০৮টি, ৩য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৪৫০৪টি, অর্থঋণ আদালতে ৫১৬২টি, ১ম সিনিয়র সহকারী জজ ৮ আদালতে ৩৫০১টি, ২য় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ২৯০১টি, ৩য় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৫২৯৬টি, ৫ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৫৬৭৬টি, ১ম অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে ৪৪৩৯টি, ২য় অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে ৩১১৮টি, ৩য় অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে ৭০৯টি মামলা ঝুলছে।
এছাড়া ২১ চৌকি আদালতের মধ্যে পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৩০৪৮টি, সাতকানিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৬৩৫টি, বাঁশখালী যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ১৪০টি, মীরসরাই সহকারী জজ আদালতে ২৭১৭টি, সীতাকুণ্ড সহকারী জজ আদালতে ৩৫৪৬টি, হাটহাজারী সহকারী জজ আদালতে ৫৪২৬টি, পটিয়া ১ম সহকারী জজ আদালতে ৭৬৭৪টি, পটিয়া ২য় সহকারী জজ আদালতে ৩১৫০টি, পটিয়া অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে ১৬টি, বোয়ালখালী সহকারী জজ আদালতে ২৯৬৭টি, আনোয়ারা সহকারী জজ আদালতে ৩৯৩৪টি, চন্দনাইশ সহকারী জজ আদালতে ৩৯৫৩টি, সাতকানিয়া সহকারী জজ আদালতে ৬৮৩৭টি, সাতকানিয়া অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে ৩১৯টি, লোহাগাড়া সহকারী জজ আদালতে ৩৯৮৮টি, বাঁশখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৩৯৮২টি, বাঁশখালী অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে ৪টি, রাউজান সহকারী জজ আদালতে ৩৫৯৯টি, ফটিকছড়ি সহকারী জজ আদালতে ৫৫০৯টি, রাঙ্গুনিয়া সহকারী জজ আদালতে ৩১৪১টি এবং সন্দ্বীপ সহকারী জজ আদালতে ঝুলছে ৬১৪টি দেওয়ানি মামলা। উপরে উল্লেখিত পরিসংখ্যানের মধ্যে ৬৫ হাজার ১৯৯টি মামলা হচ্ছে উপজেলায় থাকা ২১টি চৌকি আদালতের।
আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, সমন ও নোটিশ জারির প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত যাতে বিচারক থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাড়াতে হবে আদালত ও বিচারকের সংখ্যা। মিনিমাম আরো ২০ থেকে ৩০টি আদালতের প্রয়োজন রয়েছে চট্টগ্রামে। এর বাইরে অন্যান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় দেওয়ানি মামলার জট লেগেই থাকবে।
চট্টগ্রামের জেলা জজ আদালতের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) নাজমুল আহসান খান আজাদীকে বলেন, হাজার হাজার মামলা রয়েছে। এসব মামলার বিচার কাজ পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিচারক স্বল্পতা এর অন্যতম কারণ। তাই বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। মিনিমাম চার গুণ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া আদালতের স্টাফ বাড়ানো বা লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, স্বত্ব ঘোষণা, দলিল বাতিল, দলিল সংশোধন, চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বাটোয়ারা মামলা, চুক্তি রদ, সুনির্দিষ্ট চুক্তি প্রবল মামলা, দখল পুনরুদ্ধার, ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ, ইজমেন্ট মামলা, টাকা মামলা, অগ্রক্রয় মামলা, হক সুফা অগ্রক্রয় মামলা, অর্পিত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, ভূমি জরিপ, আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা, আর্বিট্রেশন, সাকসেশন মামলা, পারিবারিক বিভেদ সংক্রান্ত বিবাহ বিচ্ছেদ, দেনমোহর, খোরপোষ, অভিভাবকত্ব, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলা, অফিস সংক্রান্ত মামলা, ঘোষণা মামলা, আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা এবং চুক্তি রদ সংক্রান্ত মামলা দেওয়ানি আদালতে ফাইল হয় এবং সেখানেই এসব মামলার বিচার চলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৈল বীজ উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধপুরুষে মিশর ও মহিলায় মালয়েশিয়া চ্যাম্পিয়ন