৩১ মনীষীর ‘চট্টল গৌরব’

| শনিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এই পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন স্বাধীন বাংলাদেশ থাকবে। শেখ মুজিবের বাংলাদেশ থাকবে। কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের মধ্যে সৃজনশীলতা আছে। সে সবসময় ভালো কাজের চিন্তা করে। অনেকের সামর্থ আছে, কিন্তু ভালো কিছু করার চিন্তা থাকে না। সুমন যেভাবে কাউন্সিলর হিসেবে তার জামালখানকে সাজাতে ব্যস্ত, সেভাবে প্রত্যেক ওয়ার্ড সাজানো গেলে নগরী অপরূপ সাজে সেজে উঠবে, পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। বৃহত্তর পরিসরে এ চিন্তা ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সোনার বাংলা। এটি একটি অনন্য কাজ হয়েছে। দেশের অন্য কোনো জেলায় এমনটি দেখা যায়নি। গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর মহসিন স্কুলের দেয়ালে ৩১ জন মনীষীর প্রতিকৃতি সম্বলিত ‘চট্টল গৌরব’ সম্বলিত ম্যুরালের উদ্বোধনকালে আলোচকবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির। বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, শিল্পী প্রণব সরকার, মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন ধর, আবুল হাশেম বাবুল, হাজী মো. সাহাবুদ্দিন, মিথুন বড়ুয়া প্রমুখ।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শৈবাল দাশ সুমন যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার মধ্যে সৃজনশীলতা আছে। সে সবসময় ভালো কাজের চিন্তা করে। অনেকের সামর্থ আছে, কিন্তু ভালো কিছু করার চিন্তা থাকে না। অনেকে অনেক কিছু পারে, কিন্তু এগিয়ে আসে না। আমাদের সমাজে কিছু ব্যক্তি আছে, যারা সমাজকে নিয়ে চিন্তা করে, জাতিকে নিয়ে চিন্তা করে। শৈবাল দাশ সুমন কাউন্সিলর হিসেবে তার ওয়ার্ডটাকে নিয়ে চিন্তা করছে। এজন্য সে অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। এভাবে প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ ওয়ার্ড নিয়ে চিন্তা করে এই নগরী সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে, পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। দার্শনিক সক্রেটিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এমন একদিন আসবে যেদিন পন্ডিত ব্যক্তিরা তাদের পান্ডিত্যের জন্য পালিয়ে বেড়াবে। মূর্খরা তাদের মূর্খতার জন্য গর্ব অনুভব করবে। দুর্নীতিবাজরা তাদের দুর্নীতির জন্য উল্লাস করবে। আমরা এখন সে স্তরে আছি। সমাজটা সে স্তরে চলে গেছে। এ স্তর থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের চট্টল দরদী কিছু মানুষ দরকার। এটা বিপ্লবীদের চট্টগ্রাম। অনেক জ্ঞানী গুণীর জন্ম এখানে। সুমন সে বরেণ্য ব্যক্তিদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছে। আজকাল এম এ আজিজ কে তা নতুন প্রজন্ম জানে না। এম এ হান্নান কে জানে না। এক্ষেত্রে আমাদেরও কিছু দায় আছে। বরেণ্য ব্যক্তিদের
ইতিহাসটা যদি ছোট করে তার ছবির নিচে লেখা থাকে, তাহলে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে তার সম্পর্কে। আমরা চট্টল মনীষীদের নিয়ে গৌরব করছি। আমরাও যদি কিছু করে যেতে পারি, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের নিয়ে গৌরব করবে। তা না হলে আমাদের শুধু পূর্ব পুরুষের সম্পত্তি নিয়েই চলতে হবে।

দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, শৈবাল দাশ সুমন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি কিছুদিন পরপর নতুন নতুন স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন থেকে জেগে উঠলে ছুটে আসেন, আমরাও চেষ্টা করি সাধ্যমতো তাঁর পাশে দাঁড়াতে। তাঁর স্বপ্নগুলো এতটাই সৃষ্টিশীল এবং বাস্তবধর্মী যে, তাকে প্রত্যাখ্যান করা যায় না। তিনি বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই। কোনো বিভাজন চাই না নিজেদের মধ্যে। আমরা বিশ্বাস করি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এই বাংলাদেশ। আমরা হিন্দু বা মুসলিম, তার চেয়ে বড় সত্য আমরা বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে হবে। অনেকে বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক, কেউ বলেন, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। আমি বলতে চাই এ কথা বলা মানে বাংলাদেশ টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা। আমার সন্দেহ নেই। আমার স্থির বিশ্বাস যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, ততদিন স্বাধীন বাংলাদেশ থাকবে। শেখ মুজিবের বাংলাদেশ থাকবে। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে পারবো, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গৌরবের। জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়িত করে গেছেন। আজকে আমরা স্বাধীন। এ উদ্যোগের সাথে জড়িত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আগামীতেও আজাদী শৈবাল দাশ সুমনের সৃষ্টিশীল কাজের সাথে থাকবে। আজাদী প্রসঙ্গে এম এ মালেক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলে, আজাদীর নাম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে উল্লেখ করতেই হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরদিন ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে সর্বপ্রথম সাহসিকতার সাথে আজাদী পত্রিকা প্রকাশিত হয়। শীর্ষ সংবাদটির শিরোনাম ছিল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। অনেকে প্রশ্ন করেন, কীভাবে এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলাম সেদিন। আমি বলি, চট্টগ্রাম সবসময় এগিয়ে থাকে। আমরা চট্টগ্রামবাসী চাইলেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারি। বৃটিশ আমলে এ চট্টগ্রামকে তিন দিন স্বাধীন রেখেছিলেন মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা। স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা হয়েছিল চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। অনেকে বলেন, আজাদী জাতীয় পত্রিকা হিসেবে প্রকাশ করছি না কেন। আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক চট্টগ্রামের মা মাটি মানুষের কথা বলার জন্যই আজাদী প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে আমিও তা-ই করে চলেছি। আজাদী সবসময় চট্টগ্রামের মুখপত্র হিসেবেই থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাণিজ্যের আড়ালে ৬ বছরে পাচার ৫০ বিলিয়ন ডলার
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা