ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আপন বড় ভাইকে দা দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল খায়েরকে দীর্ঘ ৩০ বছর পটিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব–৭ চট্টগ্রাম।
ঘটনার বিবরণে র্যাব–৭ এর মিডিয়া কর্মকর্তা নূরুল আবছার জানান, আবু তাহেরের সঙ্গে তার আপন ছোট দুই ভাই আবুল খায়ের এবং আব্দুল কাদেরের পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ–বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে আবুল খায়ের (মেজো ভাই) এবং আব্দুল কাদের (ছোট ভাই) তাদের বড় ভাই আবু তাহেরকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
১৯৯৩ সালের ২৭ জুন সম্পত্তির ভাগ–বণ্টন নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আবুল খায়ের এবং আব্দুল কাদের তাদের বড় ভাইকে ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাদের বোন আমেনা বেগম বাদী হয়ে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানায় আবুল খায়েরকে ১ নম্বর এবং আব্দুল কাদেরকে ২ নম্বর আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং ০৫; তারিখ : ২৭/০৬/১৯৯৩।
পরবর্তীতে আবুল খায়ের এবং আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারকার্য চলাকালীন আসামিরা জামিনে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। দুই আসামি পলাতক থাকায় আদালত তাদের অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১ নম্বর আসামি মো. আবুল খায়ের পটিয়া এলাকায় অবস্থান করছে– এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব–৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ৩ মে রাতে অভিযান চালিয়ে আবুল খায়েরকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আবুল খায়ের জানায়, পারিবারিক অশান্তি ও পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ–বণ্টনের দ্বন্দ্বে বড় ভাইকে খুন করেছে। তিনি আরও জানান, ঘটনার পরদিন ১৯৯৩ সালের ২৮ জুন থেকে আনোয়ারা এলাকায় ২ বছর পালিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে শ্বশুর বাড়িতে গেলে পুলিশ খোঁজাখুঁজি করায় আসাম দিয়ে ভারত যাওয়ার পথে বিএসএফএর কাছে গ্রেপ্তার হন। শিলং কারাগারে ৬ মাস থাকার পর তিনি বাংলাদেশে আসেন। সিলেটে ৬ মাস কাটানোর পর রাঙ্গুনিয়া থানার কমলাছড়ি এলাকায় তিন বছর বসবাস করেন এবং নাম–ঠিকানা পরিবর্তন করে মিজান নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। এরপর তিনি পটিয়া থানার কামাল বাজার এলাকায় দীর্ঘ ২৪ বছর যাবত মিজান নামে ছিলেন। সেখানে কখনো দিনমজুর, কখনোবা টেক্সি চালিয়ে জীবনধারণ করতেন। রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়ায় তাকে স্থানীয়রা মিজান নামেই চিনে। দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি তার পরিবার ও আত্মীয়–স্বজন থেকে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন।