পহেলা বৈশাখ কিংবা নববর্ষ যেহেতু বাঙালির প্রাণের উৎসব তাই সকল ধর্মের মানুষ এই উৎসবে সামিল হয়। ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ি আর খোপায় ফুল গুঁজে উৎসব আনন্দে মাতোয়ারা হন। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে বিপণি বিতান ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা হতো। তবে গত বছরের মতো এবারও বৈশাখী আনন্দ করোনার কাছে মলিন হয়ে গেছে। কপাল পুড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদেরও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার আগামীকাল থেকে টানা ৮দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। একইদিন থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজানও। জানা গেছে, বৈশাখী বাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা। কারণ বৈশাখীতে সারাদেশের বাজারে এসএমই খাতের ব্যবসায়ীদের পণ্যই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। গতবারের চেয়ে এবার ব্যবসায়ীদের ২০ শতাংশ বেশি প্রস্তুতি ছিল। এছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো গত ৬ মাস ধরে বৈশাখী পোশাকের প্রস্তুতি নিয়েছে। অনেকে ফটোসেশন শেষে হাউসগুলোতে আনার প্রক্রিয়াও শেষ করে। অথচ শেষ মূহুর্তে সবকিছু ভেস্তে গেছে। এই চট্টগ্রামে শুধুমাত্র বৈশাখের বাজার প্রায় তিনশত কোটি টাকার। করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় পুরোটাই লোকসানে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর করোনার কাছে আমরা ঈদ বাজার ও বৈশাখী বাজার হারিয়েছিলাম। বৈশাখী উৎসবকে কেন্দ্র করে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসে এখন তো জীবন নিয়ে টানাটানি। কোনো মতে কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন দিয়েছি। এখন এপ্রিল মাসের বেতন কোত্থেকে দিবো সেটিই বুঝতে পারছি না। ব্যবসায়িক ক্ষতি টাকার অংকে বলা মুশকিল। বৈশাখী পোশাক তো অন্য সময় বিক্রিও হবে না। আবার আগামী বছর বর্তমান ট্রেন্ড চলবে কিনা সেটিও একটা বিষয়।
ফ্যাশন হাউসের উদ্যেক্তারা জানান, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই মৌসুম কেন্দ্রিক। বৈশাখ ও ঈদ পুঁজি করে ব্যবসা পরিচালিত হয়। গতবারের মতো এবারও করোনার কারণে বৈশাখ কেন্দ্রিক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফ্যাশন হাউস ‘অনিন্দ্য’ এর স্বত্বাধিকারী এবং ফ্যাশন ডিজাইনার লুৎফা সানজিদা দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনায় ছোট বড় সব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত বছর ব্যবসায়ীরা বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই সবার আশা ছিল হয়তো ২০২১ সালটা ভালো যাবে। কিন্তু গত এক মাস ধরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবকিছু এলেমেলো হয়ে যায়। এখন মনে হচ্ছে, বেঁচে থাকাটাই যেন বড় প্রাপ্তি।