২৯ মার্কেটে এখনো নিশ্চিত হয়নি অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা

ফায়ার সার্ভিসের তাগাদায়ও উদাসীন ব্যবসায়ীরা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত নগরীর ২৯ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে এখনো নিশ্চিত করা হয়নি পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা। গত বছর ঝুঁকিপূর্ণ এসব মার্কেটের দৃশ্যমান স্থানে ‘অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট’ লিখা ব্যানারও সাঁটিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। তারপরেও এসব মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ফায়ার এক্সটিংগুইসার (অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র) নেই। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের তাগাদা দেয়া হলেও এ ব্যাপারে তারা বরাবরই উদাসীন। প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫ কেজির ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখলে বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এছাড়া শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে, তাই অগ্নিকাণ্ড হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা আছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের দু’একটি বড় শপিং মল ছাড়া বাকি কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জাম নেই। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ব্যবসায়ী ফায়ার লাইসেন্সেরই আওতায় আসেননি। দেখা যায়, অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ফায়ার সার্ভিসের অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেন পরবর্তীতে তারা আবার চুপ হয়ে যান। এক্ষেত্রে প্রতিটি দোকানে যদি অন্তত ৫ কেজি ওজনের একটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (এক্সটিংগুইসার) থাকে তাহলে যেকোন বড় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভূক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের মধ্যে রয়েছে- কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকার হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া মার্কেট ও বলির হাট মার্কেট। এছাড়া লামা বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার ভেড়া মার্কেট, চাউলপট্টি, শুটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন জুট মার্কেট এবং ওমর আলী মার্কেট। বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকার পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট ও ফইল্যাতলী বাজার। ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকার চৌধুরী মার্কেট ও কলসি দীঘিরপাড় এলাকাধীন মার্কেট। চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে চক ভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল ও গোলজার মার্কেট। এছাড়া নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন এলাকার মধ্যে রিয়াজুদ্দীন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরি বাজার ও তামাকুমন্ডি লেন। অপরদিকে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট ও কর্ণফুলী মার্কেট। তবে বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় কোনো মার্কেট নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিনিরাপত্তায় দেশের নাগরিকরা খুব বেশি সচেতন নন। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনায় আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও খুব বেশি হয়। প্রায় আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন আইন মেনে নির্মিত হচ্ছে না। গলিগুলো অত্যন্ত সরু। এসব সরু গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশও অসম্ভব। এছাড়া পুকুর কিংবা জলাধারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে দেখে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকবে না। তাই অগ্নিনিরাপত্তা আইন মেনে প্রত্যেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে। পাশাপাশি আগুন নেভাতে শপিং সেন্টারগুলোতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা ও ছয়তলার ওপরে প্রতি তলায় সেফটি লবির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে বৈদ্যুতিক তারে কনসিল ওয়্যারিং থাকা, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বক্স ও ডিমান্ড বক্সের নিরাপদ অবস্থানে থাকা এবং স্মোক ও হিট ডিটেক্টর রাখা এবং মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীদের নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
জানতে চাইলে পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত বছরের চেয়ে মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তার প্রস্তুতি ভালো। গত বছরের অক্টোবরে জহুর হকার্স মার্কেট সংলগ্ন জালালাবাদ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে অনেক ব্যবসায়ী ফায়ার এক্সটিংগুইসার নিয়েছেন। প্রত্যেককে নিজের স্বার্থে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
রিয়াজুদ্দীন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীত মৌসুমে
অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থাকে। বাজারের অনেকগুলো গলি সরু। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে সমস্যা হওয়াটাও স্বাভাবিক। তাই আমরা ব্যবসায়ীদের অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখার জন্য সব সময়ই তাগাদা দিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি ব্যবসায়ীদের আবারও জানাবো।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন ধরে অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জাম রাখার জন্য সচেতন করে যাচ্ছি। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটে। কারণ এই সময় আবহাওয়া খুব আদ্র থাকে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে-চট্টগ্রামের অনেক মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ব্যবসায়ীদের ফায়ার সরঞ্জাম রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। কারণ প্রায়শই দেখা যায়, অধিকাংশ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আগুন লাগার পর কিছুটা দৌঁড়ঝাঁপ করেন। অথচ পূর্ব প্রস্তুুতি থাকলে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়। আমরা তালিকাভুক্ত মার্কেটের দৃশ্যমান জায়গায় অগ্নিঝুঁকি মার্কেট লিখে ব্যানার টানিয়ে দিয়েছি। ব্যবসায়ীদের আমরা আবারও তাগাদা দিবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতাল কর্মচারীদের চারটি সমিতির ব্যাংক হিসাব জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে অস্থিরতা সৃষ্টির কুশীলবরা চিহ্নিত