বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটার হিসেবে তকমাটা নিজের গায়ে লাগিয়ে ফেলেছেন মোমিনুল অনেক আগেই। অবশ্য ব্যাট হাতে তার প্রমাণও রেখেছিলেন। কিন্তু মাঝখানে ঘটে ছন্দ পতন। হারাতে অধিনায়কত্ব। তারপরও যেন মোমিনুল ফিরতে পারছিলেননা মোমিনুল রূপে। অথচ এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে ১১টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। আরও বড় প্রতিপক্ষ, কঠিন পরিস্থিতি ও শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলেছেন বড় ইনিংস। কিন্তু গতকালের সেঞ্চুরি হয়তো কখনোই ভুলবেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। টেস্ট ক্যারিয়ারের দীর্ঘতম খরার পর যে শতরানের বর্ষণে সিক্ত হলেন তিনি। মোমিনুল সবশেষ সেঞ্চুরি যখন করেছিলেন, তখনও তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক। কোভিডের থাবায় গোটা বিশ্বের মতো ক্রীড়াঙ্গনও থমকে দাঁড়িয়েছিল। সেই ইনিংস তার ক্যারিয়ারের অপ্রাপ্তি ঘোচানো এক সেঞ্চুরি। দেশের বাইরে প্রথমবার স্বাদ পেয়েছিলেন শতরানের। ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে সেই ইনিংসের পর ২৬ মাস হতে চলেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে যখন ব্যর্থ হলেন, তখন সেঞ্চুরিবিহীন ইনিংস হলো ২৬টি। অবশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে অবসান হলো তার ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অপেক্ষার। মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার ৬৬১ রানের লিড নিয়ে যখন ইনিংস ঘোষণা করল বাংলাদেশ, মুমিনুল তখন অপরাজিত ১২১ রানে। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে বেশ দ্রুত রানও তুলেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ৮৩.৪৪। ১৪৫ বলের ইনিংসে চার মেরেছেন ১২টি আর ছক্কা ১টি। সেঞ্চুরি ছাড়া এই ২৬ ইনিংসে তার ফিফটি ছিল মাত্র ৩টি। শ্রীলঙ্কায় ওই শতরানের ৩ ইনিংস পরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে খেলেন তিনি ৭০ রানের ইনিংস। আবার ৪ ইনিংস পর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে করেন ৮৮। এরপরই শুরু হয় দুঃসময়ের। যা কেড়ে নিয়েছে ২৬ মাস ও ২৬ ইনিংস। ব্যাটসম্যানদের বাজে সময় আসে অনেক। কিন্তু মোমিনুলকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন ব্যাটিংই ভুলে গেছেন। এক পর্যায়ে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি টানা ৯ ইনিংসে। ব্যাট হাতে সেই কালো সময়টা তার নেতৃত্বের অধ্যায়েরও সমাপ্তি ডেকে আনে। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে বাস্তবতা ছিল আসলে, দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন। পরেতো গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টে ব্যর্থতার পর একাদশেও জায়গা হারান। তার টেস্ট ক্যারিয়ারও তখন অনিশ্চিত। ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেও জায়গা পাননি একাদশে। দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরে সুযোগ পান ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন। তবে সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হন। গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ইনিংসেও পাননি বড় রান। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ২০ রানে। এরপর এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে আবার ফিরেন অল্পতে। সব মিলিয়ে দুঃসময়ের মেঘ আবার জমতে শুরু করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর ঘনীভূত হতে দিলেন না মোমিনুল দারুন এক সেঞ্চুরি করে।












