সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গতকাল সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে একটি ভিডিও। ভিডিওতে ইসলামি মাহাজের হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন রোহিঙ্গা যুবক মো. হাশিম (২০)। এ সময় তার হাতে ছিল একটি বিদেশি পিস্তল। একাধিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। বিভিন্ন ক্যাম্পের চারজন প্রধান বা হেড মাঝিকে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ভিডিওতে হাশিম জানান, ইসলামি মাহাজের জিম্মাদার বা নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা টার্গেট কিলিংয়ে অংশ নেন। তার মতো ২৫ জন যুবকের হাতে ২৫টি পিস্তল দেয়া হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের আগে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা প্রদান করা হতো। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পক্ষে যারা বাংলাদেশ সরকারের জন্য কাজ করে তাদেরকে টার্গেট করে কিলিং মিশন চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো তারাই ঘটিয়েছেন বলে ভিডিওতে দাবি করেন হাশিম।
স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিওতে তিনি সমপ্রতি ১৮ নং ক্যাম্পের হেড মাঝি জাফর, ৭ নং ক্যাম্পের ইসমাইল, কুতুপালং বর্ধিত ৪ নং ক্যাম্পের মো. এরশাদ, আজিমুল্লাহ ও সানাউল্লাহসহ ক্যাম্প পাহারাদারকেও (স্বেচ্ছাসেবক) হত্যার কথা স্বীকার করেন। ভিডিওতে ইসলামি মাহাজ নামে সংগঠনের কয়েকজন নেতার নাম বলা হয়। তারা হচ্ছেন সাহাব উদ্দিন, রহমত উল্লাহ, হেড মাঝি ভুইয়া ও মৌলভী রফিক। এদের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় তারা টার্গেট কিলিংয়ে অংশ নেন। ভিডিওতে ওই রোহিঙ্গা যুবক খুনের মতো জঘন্য অপরাধে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সকলের কাছে ক্ষমা চান এবং ভালো হতে চান বলেও জানান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও দেখে রোহিঙ্গাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে নানা গ্রুপ ও অস্ত্রের অভাব নেই। হয়ত ইসলামি মাহাজের বিরোধী কোনো গ্রুপ ওই যুবককে দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের ভিডিও করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গা ও মাঝিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজনও উদ্বিগ্ন।
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গা যুবকের ভিডিওটি আমরা দেখেছি। এ যুবক যাদের নাম উল্লেখ করেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করছি। ক্যাম্পের যেকোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।