২২ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

রেলে চড়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে যাওয়ার যে স্বপ্ন দেশের মানুষ গত কয়েক দশক ধরে দেখছেন তা এখন সত্যি হওয়ার পথে। পর্যটন নগরীকে কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেওয়া দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটারের রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের এর মধ্যে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, হারবাং, রামু এবং চট্টগ্রাম অংশে মিলে ৬০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। রেল লাইন বসানোর পাশাপাশি ছোট-বড় ব্রিজ নির্মাণ-কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং, ওভারপাস, আন্ডারপাস, স্টেশন বিল্ডিং এবং মাটি ভরাটসহ পুরো প্রকল্পের ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে। সরকারের উচ্চ মহলের টার্গেট রয়েছে মূলত আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই ট্রেন যাবে পর্যটননগরী কক্সবাজারে। এই টার্গেট নিয়েই কাজ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বাকি ২২ শতাংশ কাজ দ্রুত শেষ করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবে বলে আশাবাদী প্রকল্প কর্মকর্তারাও। প্রকল্পের অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিনিধি দল গত তিনদিন (সোম, মঙ্গল ও বধুবার) প্রকল্প এলাকায় কাজের অগ্রগতি পরির্দশন করেছে। সাইট ভিজিটের পর রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের সাথে বৈঠক করেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী জানান, দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার পথের মধ্যে ৬০ কিলোমিটারে
রেললাইন বসে গেছে। ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে কক্সবাজার সাইটে কাজ এগিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম অংশে বসেছে মাত্র ১৫ কিলোমিটার। প্রকল্পের বেশির ভাগ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে।
যেগুলো বাকি আছে সেগুলোও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ।
প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। আমরা চেষ্টা করছি ২০২৩ সালের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে। এরমধ্যে কক্সবাজার ঝিলংজায় দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ঝিনুকের আদলে নির্মিত বিল্ডিংয়ে এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ডুলাহাজারা স্টেশনের কাজও শেষ হয়েছে। এদিকে দোহাজারী ও হারবাং স্টেশনের কাজও শেষ পর্যায়ে। চকরিয়া স্টেশনের ছাদ হয়ে গেছে। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৭ মাস বৃষ্টি হবে না। এই সময়ের মধ্যে পুরোদমে কাজ করলে আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। এরপর আমরা যে কোনো প্রকারে একটি ট্রেন চালিয়ে দেবো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। এর পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের কাজ শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারা দিন সমুদ্র সৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা যাওয়া করতে পারবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে নয়টি স্টেশন রয়েছে।
এগুলো হলো-দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর। এজন্য সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু। এছাড়া এ রেলপথে নির্মাণ করা হয়েছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করার প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দাবি করেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে। একইভাবে সাগরপথে জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অন্য দেশ থেকে মালামাল আনতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এরপরও কাজ চলছে।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজটি করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছেলের জন্মদিনের কেক কিনতে গিয়ে না ফেরার দেশে
পরবর্তী নিবন্ধআগাম লবণ উৎপাদন শুরু