২২ বছরে ২৬ লাখ গাছ কেইপিজেডে সবুজ বিপ্লব

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

এক পাশে বয়ে চলেছে কর্ণফুলী। অপর দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সংযোগ সড়ক। এরপর বঙ্গোপসাগর। মাঝে প্রায় আড়াই হাজার একর জায়গার ন্যাড়া পাহাড়গুলোতে রীতিমত সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। সরকারি অনুমোদনের পর গত ২২ বছরে এখানে লাগানো হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ গাছ। এ ধরনের সবুজ বিপ্লব দেশের যে কোনো ইপিজেডের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

শুধু গাছ লাগানোই নয়, কেইপিজেডে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি কৃত্রিম হ্রদ। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা হয়েছে সড়ক ও দৃষ্টি নন্দন কারখানা। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের বিনোদনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশ্বমানের একটি গলফ মাঠ।

কেইপিজেড সূত্র জানায়, পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত অনুযায়ী, ২৪৯২ একর আয়তনের কেইপিজেডে ৫২শতাংশ জমি অর্থাৎ প্রায় ১৩০০ একর জমি সবুজ ও উন্মুক্ত রাখার কথা। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ জমিতে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন ও বাকী ১৯শতাংশ জমি উন্মুক্ত রাখার কথা। চুক্তি অনুযায়ী, প্রায় ৮২২ একর জমিতে লাগানো হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ গাছ। বাকী ৪৭৮ একর জমিতে লেক ও সবুজ মাঠের মাধ্যমে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কেইপিজেডে ২৫টি জলাধার আছে, যাতে ৫০০ মিলিয়ন গ্যালন পানি সংরক্ষিত থাকে। এতে এলাকার পানির সংকট অনেকাংশে কেটে গেছে। লেকগুলোতে প্রতি বছরই বাড়ছে অতিথি পাখির বিচরণ। পরিবেশের এমন উন্নতির ফলে কেইপিজেডে প্রায় ১৩৭ প্রজাতির পাখির বসতি তৈরি হয়েছে। সমপ্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব বোট্যানির গবেষণা রিপোর্টে কেইপিজেডে প্রায় ৪০০ প্রজাতির গাছপালা ও উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, আর্ন্তজাতিক পরিবেশ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার সমপ্রতি তাদের এক রিপোর্টে কেইপিজেডের পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমের ভূয়সী প্রসংশা করে। বর্তমানে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে, এতে বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা ও উদ্ভিদের সংগ্রহ থাকবে। কর্ণফুলী ইপিজেডে প্রবেশের মুখে নজর কাড়ে সারি সারি আম গাছ। মূল সড়ক থেকে একটু দক্ষিণে গেলে দেখা মেলে নারকেল গাছের বাগান। সবুজের এমন সমারোহের মাঝে শোনা যায় কারখানার যান্ত্রিক আওয়াজও। কোথাও জুতা বানানো হচ্ছে, কোথাওবা জামা। একটি কারখানা থেকে আরেকটি কারখানার দূরত্ব বেশ। এ দূরত্বে লাগানো হয়েছে মেহগনি, গর্জন, হরীতকী, নিম, আমলকী কিংবা আগরজাতীয় ঔষধি গাছসহ নানা বৃক্ষ। জানা যায়, বর্তমানে কেইপিজেডে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ সেগুন গাছ, ৩ লাখ মেহগণি গাছ, দেড় লাখ গামারি গাছ, ৫০ হাজারের বেশি গর্জন গাছ। হাইব্রিড গাছ আছে ৭৫ হাজার। এছাড়া আছে অর্জুন, বহেরা, হরীতকী, নিম, আমলকী ও আগরজাতীয় প্রায় ১ লাখ ঔষধি গাছ। আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল, সফেদা, কামরাঙা, কুল, পেয়ারাসহ ফলজ গাছ আছে ৯৫ হাজার। তাছাড়া জারুল, সোনালু, তেলসুর, শিলকড়ই, রেইনট্রি, কৃষ্ণচূড়া, ছিকরেশি, চম্পা, ঝাউ, চাপালিশ, বকুল, কাঠবাদামসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় আরো ৭ লাখ গাছ রোপণ করা হয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য দেশিবিদেশি প্রজাতির কয়েক লাখ গাছও রয়েছে।

কেইপিজেডের ডিজিএম মুশফিকুর রহমান বলেন, কেইপিজেডে পরিবেশবান্ধব রপ্তানি অঞ্চলের মডেল হতে চায়। এ পর্যন্ত ২৫ লাখ গাছ লাগানো হয়েছে। সবুজের সমারোহ ঘটাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে চুরি মামলার আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধআগুনে পুড়ল চার বসতঘর