বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে গিয়ে ২২০ ডিজিটের ‘কারিগরি ভূতের’ কবলে পড়েছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকরা বলছেন, এটা অস্বাভাবিক কার্যক্রম। এতে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। মোবাইল কিংবা বিদ্যুৎ অফিসের রিচার্জের প্রিন্টেড কপি থেকে প্রিপেইড মিটারে নির্ভুলভাবে ২২০ ডিজিট প্রবেশ করানো কঠিন একটি কাজ। তিনবার ভুল করলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দেন দরবার এবং বাড়তি খরচ ছাড়া লক হয়ে যাওয়া মিটার খোলা সম্ভব হচ্ছে না।
কেন এত ডিজিটের ‘কারিগরি ভূত’ গ্রাহকের ঘাড়ে চেপেছে? বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতের মূল্য পরিবর্তনের কারণে এমনটি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক সংযোজন হচ্ছে প্রিপেইড মিটার সিস্টেম। সাধারণ মিটারের নামে যেখানে কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি হতো, সেখানে প্রিপেইড সিস্টেম আসার পর বিদ্যুৎ চুরি শূন্যের কোটায় নেমে আসে। একই সাথে বিদ্যুতের বকেয়ার খাতাও বন্ধ হয়ে যায়। লাখ লাখ টাকার বকেয়া বিল আদায় নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের ঘুম হারাম হতো। বর্তমানে গ্রাহকেরা আগাম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। প্রিপেইড মিটার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এক টাকার বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া নেই।
এই সিস্টেম দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রিপেইড মিটারিং সিস্টেম বিদ্যুৎ সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু প্রশংসিত সিস্টেমটি এখন জনভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য বলছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
প্রিপেইড মিটারিং সিস্টেম চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ওই সময় মিটার রিচার্জ করতে ২০ ডিজিটের নম্বর দিয়ে একটি টোকেন প্রদান করা হতো। ওই টোকেন থেকে ২০টি ডিজিট প্রিপেইড মিটারে প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিটারে টাকা রিচার্জ হয়ে যেত। ২০ ডিজিট মিটারে প্রবেশ করাতে অনেক মানুষকে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু ২০ ডিজিটের স্থলে কিছুদিন ধরে দেয়া হচ্ছে ২২০ ডিজিটের টোকেন। এতে সমস্যায় পড়েছে মানুষ। অনেকে বলছেন, একসাথে নির্ভুলভাবে ২২০ ডিজিট প্রবেশ করানো কঠিন ব্যাপার।
পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, অনেক মানুষ ২০ ডিজিট ডায়াল করতে হিমশিম খান। সেখানে ২২০ ডিজিট রীতিমতো ‘অত্যাচার’।
মোহাম্মদ রাশেদ নামে আরেকজন বলেন, আমার ঘরের মিটার সিঁড়ির নিচে। প্রিপেইড করার পর কষ্ট করে রিচার্জ করছি। আগে কোনোরকমে ২০ ডিজিট করতাম। ২২০ ডিজিট কঠিন ব্যাপার।
একাধিক গ্রাহক অসন্তোষ প্রকাশ করে আজাদীকে বলেন, ২২০ ডিজিটের মধ্যে একটি ডিজিট ভুল হলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয়। এভাবে তিনবার ভুল করলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। লক মিটার খোলার জন্য যেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসে। সেখানে গিয়ে পড়তে হচ্ছে ঝামেলায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি একটি কারিগরি বিষয়। বিষয়টির উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিদ্যুতের মূল্য পরিবর্তনের কারণে এমনটি হয়েছে। তবে এই অবস্থা থেকে উন্নতির চেষ্টা করা হচ্ছে। মিটারগুলো সব অনলাইন করে ফেলা সম্ভব হলে এই দুর্ভোগ আর থাকবে না। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিটার রিচার্জ করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে মিটার অনলাইন করার চেষ্টা চলছে।
২২০ ডিজিট মিটারে প্রবেশ করানো কঠিন ব্যাপার বলে স্বীকার করেন বিদ্যুৎ বিভাগের পদস্থ এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তবে ধীরে ধীরে আমরা অনেক কিছুর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাই। এটাতেও হয়ে যাব।
অপর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যুতের ট্যারিফ (মূল্য) পরিবর্তন হলে ডিজিট পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। আগে এক লাইনে ২০টি ডিজিট ছিল, এখন সেখানে ২০ ডিজিট করে ১১ লাইন হয়েছে। তবে গ্রাহকেরা কিভাবে মিটার রিচার্জ করবেন তার একটি নমুনা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ওগুলো দেখলে গ্রাহকদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।