২০২৫ সালের শেষে বে টার্মিনালের কার্যক্রম চালু করার আশা

আগামীতে আরো ইতিহাস গড়বে চট্টগ্রাম বন্দর ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং অনুষ্ঠানে নৌ প্রতিমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

আগামী ২০২৫ সালের শেষদিকে বা ২০২৬ সালের শুরুতে বে টার্মিনালের কার্যক্রম চালু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শুরুতে বেলুন উড়িয়ে জাহাজের বার্থিং উদ্বোধন করা হয়। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আজকে চট্টগ্রামের বন্দরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজের বার্থিং নিশ্চিত করতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং পুরো দেশের জন্য গর্বের। এছাড়া যুক্তরাজ্যের কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিংফোর্ডের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। বাংলাদেশের তিনটি বন্দরের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা আছে। এছাড়া আমাদের সাথে যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্ক কিন্তু অন্যরকম। দেশের উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বন্দরের ইতিহাসেও যুক্তরাজ্যের ভূমিকা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির চালিকাশক্তি। বন্দর থেমে গেলে দেশ থেমে যায়। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা আছে। ১৪ বছর বাংলাদেশের অগ্রগতির কৃতিত্বের অন্যতম দাবিদার চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের অংশীজনদের দাবি সরকার গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে ১৮টি গ্যান্ট্রি ক্রেন আছে বন্দরে। ৪৮ ঘণ্টায় একটি জাহাজ হ্যান্ডেল হচ্ছে। আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দর আরো ইতিহাস গড়বে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে বেটার্মিনাল চালু করার কথা থাকলেও করোনা মহামারি এবং ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বহুবিধ সমস্যায় আছি। আশা করি ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুতে বেটার্মিনালের বৃহৎ অংশ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর চালু করতে সক্ষম হবো। এছাড়া মাতারবাড়ি বন্দর ২০২৬ সালের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে চালু হবে। পদ্মাসেতু থেকে সরে গিয়ে বিশ্বব্যাংক এখন আফসোস করছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠনের সাথে বাংলাদেশ জড়িত। বলা হয়েছিল বাংলাদেশ হল তলাবিহীন ঝুড়ি। তলাবিহীন ঝুড়ি যারা বলেছে তারা নিজেদের শুধরে নিচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমি বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচনে আরও বেশি জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করবে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, আজ বন্দরের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ কমন অ্যাটলাস বন্দরে ভিড়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বন্দরকে মাইনমুক্ত করে চালু করেছিলেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রসীমা জয় করেছেন। বেটার্মিনাল জাতির চাহিদা। ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। আমরা করোনার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ত্রি মিলিয়ন কন্টেনার ক্লাবে অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট। পোর্টও হবে স্মার্ট। এর জন্য স্মার্ট টিম চাই। মাতারবাড়ি, বেটার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর একসঙ্গে অপারেশন করলে জাতীয় আয় বাড়বে। করোনা মহামারিতেও চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়নি।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নব্বই দশক ও এর আগে অনেক দুঃসময় কাটিয়েছিল। গত ১৪ বছর একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি এ বন্দর। করোনাকালেও এ বন্দর এক ঘণ্টার জন্যেও বন্ধ ছিল না। এনসিটি তৈরির পর চার বছর কাজ হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর চার মিলিয়ন কন্টেনার ক্লাবে যাবে আশা করি। পিসিটি তৈরি আছে, যত তাড়াতাড়ি চালু হয় তত মঙ্গল। কর্ণফুলী নদী বন্দরের প্রাণ। এ বন্দর সচল রাখতে কর্ণফুলী ড্রেজিং চালু রাখতে হবে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, বহির্নোঙরে যে কার্গো লাইটারিং হয় সেই জাহাজগুলোকে এ সুবিধা দিলে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টন পণ্য আনতে পারবে। গুপ্তখাল খনন করা হলে আরও বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। তখন ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে আমাদের যে চুক্তি করতে হয় তার আর প্রয়োজন হবে না।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, এটি চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। ২০০ মিটার লম্বা বড় জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর ফলে বাংলাদেশের আমদানিরপ্তানিতে আরও গতি আসবে।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক হাইড্রোলিক সংস্থা এইচআর ওয়েলিংফোর্ডের প্রতিনিধি ড. মনজুরুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এ স্টাডি ছিল চ্যালেঞ্জিং। করোনার কারণে এটি আরও কঠিন হয়ে পড়েছিল। আজ বড় জাহাজ ভিড়েছে এটিই বাস্তবতা। আমাদের এ গবেষণাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। পাশাপাশি করোনার সময় গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের গাড়ি চাপায় প্রাণ গেল যুবকের
পরবর্তী নিবন্ধস্ত্রী মিতুর বন্ধু মাহবুবুলের আত্মসমর্পণ, কারাগারে প্রেরণ