আগামী বছর নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে দেশের মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনসমূহে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছে ইসি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল বুধবার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. খোন্দকার হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা এমিলি, আনিছুর রহমান ও মো. আলমগীর বক্তব্য রাখেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অসুস্থ থাকায় সাংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বাকি সময়ে সব দলের আস্থা অর্জন করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বুধবার রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়। জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান রোডম্যাপ ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। দেশের মেট্রোপলিট্রন ও জেলা শহরের আসনগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের কথা জানান তিনি। আহসান হাবিব খান বলেন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ একটাই। আর সেটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা। তিনি বলেন, আমরা অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন এবং অনেক আস্থাশীলতার ঘাটতির মধ্যে আছি। আমাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছি, আমরা কিছুটা হলেও আগের থেকে আস্থা অর্জনে এগিয়ে গেছি। এই কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের জবাবদিহি ও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতাও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
অনুষ্ঠানে রাশেদা সুলতানা এমিলি বলেন, কর্মপরিকল্পনা ধরেই এগিয়ে যাব আমরা। সকলের সহযোগিতা পেলে অংশগ্রহণমূলক ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবো। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জানান, অংশীজন সকলের সহযোগিতা দরকার। বাস্তবভিত্তিক ও সময়ভিত্তিক এই রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এই কর্মপরিকল্পনায় সকলের মতামত রাখার চেষ্টা করেছি আমরা। যে সকল বিষয় আমাদের আওতায় রয়েছে, তা রাখা হয়েছে। তবে, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সুপারিশগুলো রাখা হয়নি। তিনি জানান, রোডম্যাপের চ্যালেঞ্জগুলো ধরে মোকাবেলা করে সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। ভোটের এখনও এক বছর চার মাস বাকি। অনেকে ইসি নিয়ে আস্থাহীনতায় থাকলেও আগামীতে কর্মকাণ্ড দেখে আস্থাশীল হবে।
নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপে প্রতিটি ভোট কক্ষে সিসি টিভি স্থাপন এবং সর্বোচ্চ দেড়শ আসনের ইভিএমের ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মেট্টোপলিট্রন ও জেলা শহরের আসনগুলোয় ইভিএম ব্যবহার করার কথা জানানো হয়েছে। এছাড়াও রোডম্যাপে ১৪টি চ্যালেঞ্জ ও ১৯টি উত্তরণের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি আইন সংস্কার কাজ শেষ করা হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হবে এবং ২০২২ সালে আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে নতুন দল নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করা হবে এবং ২০২২ সালের মে মাস থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু এবং ২০২৩ সালের মার্চে চূড়ান্ত প্রকাশ করা হবে। তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংসদীয় আসন অনুযায়ী ৩০০ এলাকার তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের কাজ শেষ করা হবে এবং তফশিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হবে এবং তফশিল ঘোষণার পরও চলবে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন কাজ শুরু হবে এবং একই বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।