২০২৩ এর ব্যতিক্রমী সিয়াম সাধনা ও ঈদ উদযাপন

আয়েশা পারভিন চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর সমগ্র মুসলিম বিশ্ব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এই অপেক্ষার আনন্দ হচ্ছে নতুন সাজে নতুন রূপে নিজেকে প্রকাশ করার আনন্দ। সকল আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী ও দেশ বিদেশের সকলের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য।

আমরা আমাদের সকল সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা ভাগাভাগি করে নিতে পারি। এক সময় একটি ক্ষুদ্র পরিবেশে ঈদ উদযাপন করা হত। মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেই আমাদের এই ঈদ আনন্দ উদযাপিত হতো। পাড়া প্রতিবেশীকে নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে একটি আনন্দময় দিন কেটে যেত। খুব বেশি দূরের আত্মীয়স্বজনের সাথে তেমন যোগাযোগ হতো না। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তি নির্ভর একটি বিশ্ব।

তাই আমরা আমাদের সকল সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা মুহূর্তে ভাগাভাগি করে নিতে পারে। পবিত্র সিয়াম সাধনার এই মাসে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও দর্শনীয় স্থানগুলোর সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে আমরা আমাদের মুসলিম দেশগুলোর ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার সুযোগ পেয়ে থাকি। প্রতিটি চ্যানেলে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলোর ধর্মীয় ও আদর্শগত গুরুত্ব সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। ইসলাম প্রচারের যুগের বিষয়গুলো জানা যায়। তাছাড়া মজার মজার ইফতারি তৈরির সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো ইফতার বানানো জন্য অনেক মানুষকে আগ্রহী করে তোলে।

আধুনিক প্রযুক্তির ফলে অনলাইন শপিং একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। অনেকেই সরাসরি শপিং মল অথবা বিপনি বিতানে না গিয়েও অনলাইনে কেনাকাটা করে থাকে। খুব সহজে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারে। প্রযুক্তি নির্ভর জীবন যাত্রা মানুষের ঈদ আনন্দকে আরও বেশি সহজ ও আনন্দময় করে তুলছে ।

২০০৩ সালের এই সিয়াম সাধনার মাসটি অনেকটা ব্যতিক্রমী ছিল। বিশেষ করে ধর্মীয় দিক থেকে মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে ২০২৩ এর পবিত্র রমজান মাসটি কাটিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া বড় বড় ভূমিকম্প ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনাগুলো মুসলিম বিশ্বের মানুষকে কেয়ামতের আলামতের বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করতে থাকে। বিশেষ করে তুরস্কের ভূমিকম্পের পর থেকে এই আলামতগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা চলছে। আরব বিশ্বের মরুভূমির বুকে সবুজ বনায়নের ঘটনা কেয়ামতের আলামতের বিষয়টিকে আরো বেশি স্পষ্ট করেছে।

বিভিন্ন হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে; যেদিন থেকে মরুর বুকে সবুজ ঘন বনাঞ্চল দেখা যাবে ও নগ্ন পায়ের মানুষরা সূঊচ্চ বিশাল বিশাল ভবন তৈরিতে প্রতিযোগিতায় নামবে সেদিন থেকে কেয়ামতের আলামত আরো বেশি স্পষ্ট হবে। ২০২৩ এর পবিত্র রমজান মাসে দাজ্জাল আগমনের বিষয়টি বারবার সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০২৩ সালের সিয়াম সাধনার প্রতিটি ক্ষণ দাজ্জালের আগমনের বিষয়টি নিয়ে সকলেই এক আতঙ্কিত সময় পাড় করছে।

অনেকেই ধারণা করছে; ইতিমধ্যেই দাজ্জাল পৃথিবীতে এসে গেছে। আসলে কতটুকু সত্য কেউ যেমন বলতে পারে না এবং তেমন কোনো প্রমাণও নেই। ২০২৩ এর এই রমজান মাস শুরুর প্রথম থেকে ১৫ই রমজানের দিনটিকে নিয়ে এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটার বিষয় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে ।

বিভিন্ন প্রচারপ্রচারের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি; ২০২৩ এর রমজানের ১৫ তারিখ অর্থাৎ ১৫ রমজানে একটি প্রচণ্ড ও প্রকট শব্দ পৃথিবীকে প্রকম্পিত হবে। বড় ধরনের কোনো একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ও আতঙ্কিত ঘটনা ছাড়াই ১৫ই রমজান অতিবাহিত হয়। ২০২৩ সালের রমজান মাসে বারবার কেয়ামতের আলামতগুলো নিয়ে সকলে যেমন কৌতূহলী ছিল ঠিক তেমন আতঙ্কে ছিল।

অস্বাভাবিক অতি প্রাকৃতিক আচরণগুলো মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। বার বার মানুষ প্রকৃতির বিরুপ আচরণ দেখছে। সম্প্রতি বছরে কাবা ঘরের আশেপাশে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও তুষার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এগুলোকেও কেউ কেউ কেয়ামতের আলামত হিসেবে দেখেছে। ঈমান শক্ত করে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করাই এই সিয়াম সাধনার মাসের উদ্দেশ্য।

২০০৩ সালের রমজান মাসে অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। বিভিন্ন বিপণি বিতানগুলোতে আগুন লাগার ঘটনা সকলকে বিচলিত করেছে। ঢাকার নিউ মার্কেট ও বঙ্গ বাজারে আগুন লাগার মত ঘটনা কখনোই কারো কাম্য ছিল না।

হঠাৎ করে পরপর আগুন লাগাটা অনেক ক্ষেত্রেই মেনে নেয়া যায় না। এই আগুন সন্ত্রাসের সাথে যারা জড়িত আছে তারা হয়তো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই যাবে। কিন্তু এই আগুন সন্ত্রাসের ফলে অনেক অনেক মানুষ এক রাতেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। একদিন আগেও যারা কোটি কোটি টাকার মালিক ছিলেন তারা পরের দিন সকালে পথের ফকিরে পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যারা ব্যবসা করতে নেমেছে তাদের সমস্ত কিছুই পুড়ে যায়।

অনেক বড় আশা নিয়ে এই সিয়াম সাধনার মাসে তারা তাদের ব্যবসাবাণিজ্য শুরু করেছিল। কিন্তু আগুন সন্ত্রাসের কারণে তাদের সমস্ত আশা ভরসা এক নিমিষেই পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। আগুন লাগা অবস্থায় অনেকে লুটপাট করেছে। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা থেমে থাকে নি। এরি মাঝে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সাহায্য সহযোগিতার বিষয়টি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

২০০৩ সালের সিয়াম সাধনার মাসের শুরুতে আমাদের দেশের তাপমাত্রা তেমন বেশি ছিল না। একটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু ১৫ রোজার পর থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাথে সাথে আমাদের দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয়টি চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে; ১৫ রোজার পর থেকে সারাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। ২০২৩ এর পবিত্র রমজান মাসে প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ অনেকটাই অস্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। তবুও মানুষ দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পরে ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য অপেক্ষা করছে। আপন জনের কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য দিন শুনছে। ২০২৩ এর সিয়াম সাধনার মাসের মধ্যেই কয়েকটি বড় বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ছুটে চলার পথ যেন সুখকর হয়। সকলেই নতুন নতুন জামা কাপড় পরে সেই আনন্দ মিলেমিশে ভাগাভাগি করে নিতে পারে। ঈদের আনন্দে নিজেদেরকে একত্রিত করবে। সম্প্রীতির বন্ধনে সকল বয়সের মানুষের মাঝে সম্পর্ক গড়ে তুলবে। প্রকৃতির বিরূপ আচরণেও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে। জাগ্রত মানবতাবোধ মানুষকে আরো বেশি সহনশীল করে তুলবে।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ,

ডা. ফজলুলহাজেরা ডিগ্রী কলেজ, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমি সমুদ্র পুষি
পরবর্তী নিবন্ধজনস্বাস্থ্যখাতে বৈশ্বিক নেতৃত্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানচ্যুত হওয়া প্রসঙ্গে