২০০ টাকার স্থলে ছয় হাজার টাকা!

বিদেশি ফরোয়ার্ডারের ডেলিভারি এজেন্টদের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চট্টগ্রাম চেম্বারের চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

বিদেশী ফরোয়ার্ডারের ডেলিভারি এজেন্টরা অনৈতিকভাবে চালান প্রতি ২০০ টাকার স্থলে এখন ৬ হাজার টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের মাহাবুবুল আলম। বিষয়টিকে চাঁদাবাজি উল্লেখ করে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি লিখেছেন। গতকাল প্রেরিত চিঠিতে চেম্বার সভাপতি আরো উল্লেখ করেন, এতে আমদানিকারকের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ২ কোটি টাকা। অথচ আইনমতে তারা আমদানিকারক থেকে কোনও চার্জ নিতে পারে না।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, কন্টেনার পণ্য একাধিক পরিবহন মাধ্যমে পরিবহন হয়। ট্রান্সশিপমেন্ট ও ডেলিভারি স্থানে আনলোডিং হয়। কন্টেনার পণ্য পরিবহনে সকল স্তরের খরচ যুক্ত করেই পরিবহন ভাড়া নির্ধারিত হয়। এই বিষয়ে চিটাগাং চেম্বার ও শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় সংগঠনের শিপিং এঙপার্টদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৭ সালে সভা করে। সভার সিদ্ধান্ত মতে, এ বিষয়ে সার্কুলার নং০৩/০৭ জারি করা হয়। যেখানে বলা আছে, কন্টেনার পণ্য পরিহনে সকল খরচ কন্টেনারের ভাড়ার সাথে যুক্ত হবে। গন্তব্য স্থানের আমদানিকারক কোনো চার্জ এজেন্টকে প্রদান করবে না। এনবিআর থেকে

ফরোয়ার্ডারদের জন্য জারিকৃত এসআরও১৮/২০০৮ এর ধারা ২ এর () মতে আমদানি পর্যায়ে ফরোয়ার্ডারদেরকে বিদেশী কর্তৃক নিয়োগকৃত ডেলিভারি এজেন্ট বলা আছে। এসআরও ২০() ধারায় বলা আছে, কোনও চালানের বিএল এর উপর ফ্রেইট প্রিপেইড লিখা থাকলে, ডেলিভারি এজেন্ট প্রিন্সিপালের পক্ষে নিজ খরচে গন্তব্য স্থানে আমদানিকারককে চালান ডেলিভারি দিবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এঙচেঞ্জ গাইড লাইনের ধারা১৭ এর উপধারা ১ মতে ফরোয়ার্ডার বিদেশী প্রিন্সিপাল থেকে তাদের কমিশন ও স্থানীয় খরচ আনতে হবে এবং কমিশনের কর দিতে হবে। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮০ ধারা মতে, ফরোয়ার্ডারের কমিশনের উপর ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে। এজেন্টগণ বিদেশী নিয়োগকারী থেকে কমিশন না আনলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতি ও রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়া ইউএনসিটিএডি বা আইসিসি সেকশন৪ মতে, উক্ত পরিবহনে পরিবহনকারীকেই সকল স্তরের সেবা প্রকিউর করতে হবে। তাই নিয়ম মতে কন্টেনার পরিহনের সকল স্তরের খরচ ভাড়ার সাথে যুক্ত করেই পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ হয়। সেজন্য ফ্রেইট প্রিপেইড চালান আমদানিতে চালান মূল্য ও ডেলিভারি স্থানের খরচসহ চালান পরিবহন ভাড়া, এলসির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় দেশ থেকে পূর্বেই চলে যায়। ফ্রেইট কালেক্ট রপ্তানিতে লোড পোর্ট খরচ ও ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট খরচ গন্তব্য স্থানের খরচসহ ভাড়া সমন্বয় করেই চালান মূল্যের এলসি হয়। তাই উভয়ক্ষেত্রে ভাড়া গ্রহণকারীকেই সকল স্তরে এজেন্টের নিকট খরচ পাঠাতে হয়। কিন্তু বিদেশীদের ডেলিভারি এজেন্ট যদি প্রিন্সিপাল থেকে ডিওসি চার্জ দেশে না আনে তাহলে এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল ক্ষতি এবং চালানের ডিও আটক করে আমদানিকারক থেকে আবার চার্জ আদায় করলে এটি আমদানিকারক থেকে একই খরচ দ্বিতীয়বার নেয়া।

কাস্টমসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৪ হাজার চালান হয়। প্রতি চালানে ৬ হাজার টাকা আদায় হলে আমদানিকারকের দৈনিক ক্ষতি ২ কোটি টাকার অধিক। আমদানি খরচ বৃদ্ধিতে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে, কাঁচামাল আমদানি খরচ বৃদ্ধিতে রপ্তানি সক্ষমতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। আমদানিকারক থেকে বেআইনি ডিওসি চার্জ আদায়ের সুযোগে দেশ থেকে পূর্বে এলসিযোগে চলে যাওয়া সার্ভিস চার্জ দেশে ফেরত আসছে না। এজেন্টদের কমিশন ও স্থানীয় খরচ দেশে না আসলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা তিন দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবই উৎসব আজ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রথম পর্যায়ের ফল প্রকাশ