করযোগ্য আয় না থাকলেও রিটার্ন জমায় সবাইকেই ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে নতুন তথ্য দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেছেন, যেসব নাগরিক ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সেবা’ নেবেন, কেবল তাদেরকেই ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা দিতে হবে। যারা এসব সেবা নেবেন না, তাদের জন্য ন্যূনতম করের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। গতকাল রোববার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি‘র বাজেট সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন মন্ত্রী। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে ন্যূনতম ২ হাজার টাকার কর আরোপ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা চলছে। বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, অংশীদারিত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে–এমন সকল করদাতার ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি। টিআইএন থাকলেই ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর নেওয়ার সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম পরদিন বলেছিলেন, যাদের ক্ষেত্রে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক, সেই শ্রেণির মানুষদের জন্য এই ন্যূনতম কর বোঝা হওয়ার কথা নয়।
তবে সিপিডির সংলাপে এসে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান ২ হাজার টাকার ন্যূনতম কর প্রস্তাবের অন্য ব্যখ্যা দিয়ে বলেন, ২ হাজার টাকা আয়কর সবার জন্য নয় এবং সকল টিআইএন ধারীদের জন্যও নয়। যে টিআইএনধারী ফ্ল্যাট কিনতে চান, গাড়ি কিনতে চান, অথবা জমি কিনতে চান, এ রকম ৪০টি সেবার কথা বলা আছে একটা পর্যায় পর্যন্ত…। আমার টিআইএন আছে, আমি গাড়ি কিনি না, ফ্ল্যাট কিনি না, কোনো সেবার জন্য সরকারের কাছে যাই না, আমাকে ২ হাজার টাকা দিতে হবে না।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে প্রান্তিক মানুষকে রক্ষা করাই সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলার জন্য আমরা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতা বাড়াচ্ছি, কম দামে চাল, ডাল তেল বিক্রি করছি। আমরা মধ্যবিত্তের কাছে সেভাবে যেতে পারছি না। তবে আমরা যদি অ্যাড্রেস করতে পারি, তাহলে উপরেও সেই কল্যাণটা আস্তে আস্তে যাবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সহযোগিতার জন্য ‘ইনকাম ট্যাঙ রিটার্ন প্রিপেয়ারেটর বা টিআরপি’ নামে এজেন্ট নিয়োগের যে কথা উল্লেখ আছে, সেটি নিয়েও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আগে ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট ছিল। এটাও সে রকম একটা প্রস্তাব। এখানে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যদি কেউ বুঝে সুঝে করে আনতে পারে, আনুক। এটা ভালো হলে আমরা রাখব। না হলে বাদ দিয়ে দেব। তবে এটা পাইলট আকারে হলেও করা উচিৎ। খারাপ হলে আমরা উঠিয়ে নেব।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এই প্রস্তাব বিদেশের অনেকে পছন্দ করেছে। এই ধরনের বিরাট একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ায় আমার নিজেরই ভয় হচ্ছে। বাট আমার ধারণা আমরা পারব। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অগ্রিম আয়কর কর কাটা বন্ধ হওয়া উচিৎ বলেও মনে করেন মন্ত্রী।