২০টি নতুন জাহাজ কিনতে চায় বিএসসি

হাসান আকবর

দুই বছরে ৬টি, ৩০ সালের মধ্যে আরো ১৪টি ।। ৫শ কোটি ডলারের বাজারের বড় অংশীদার হতে চায় | সোমবার , ১২ জুন, ২০২৩ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্র বাণিজ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশি আমদানিরপ্তানি পণ্য পরিবহনের বাজার প্রায় ৫শ কোটি ডলারের। বিশাল এই বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব একেবারে তলানীতে। এই বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ২০টি জাহাজ কিনতে চায়। এর মধ্যে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে ৬টি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে আরো ১৪টি। মোট ২৮টি জাহাজের একটি বহর গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিএসসি কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বিএসসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিশ্বের নানা দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করে। একই সাথে রপ্তানি করা হয় ৩০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। দেশের আমদানিকৃত পণ্যের অন্তত ৮২ শতাংশ পরিবাহিত হয় সমুদ্র পথে। রপ্তানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই পরিবাহিত হয় জাহাজের মাধ্যমে। এক বছরের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যের যে পণ্য সমুদ্র পথে পরিবাহিত হয় তাতে ব্যয় হয় অন্তত ৫শ কোটি ডলার। এই টাকার প্রায় পুরোটা বিদেশি জাহাজ মালিকদের পকেটে চলে যায়। বিশাল এই বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নগণ্য।

বিএসসি কিংবা দেশীয় বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছে পর্যাপ্ত জাহাজ না থাকায় বাংলাদেশ সমুদ্র বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। বর্তমানে দেশে মাত্র ৮টি কন্টেনার জাহাজ রয়েছে। খোলা পণ্যবাহী জাহাজ রয়েছে ৮৪টির মতো। সরকার ফ্ল্যাগ প্রোটেকশন আইনের মাধ্যমে দেশীয় জাহাজ শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করলেও পর্যাপ্ত জাহাজের অভাবে তা ব্যাহত হচ্ছে। দেশীয় জাহাজ না থাকায় পরিবহন ব্যয়ের কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রায় বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। সরকারি সংস্থা বিএসসি কিংবা দেশীয় বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বহরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো গেলে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়ত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএসসির বহরে এক সময় ৪৪টি জাহাজ ছিল। কিন্তু নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে এক সময় বিএসসি অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়ে। জাহাজ বিক্রি করে কর্মকর্তাকর্মচারীদের বেতনভাতা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

১৯৮০ সালে সংস্থার বহরে জাহাজের সংখ্যা নেমে আসে ২৬টি। পরে তা এসে ঠেকে মাত্র ২টিতে। বেহাল এই অবস্থায় ২০১৮ সালে বিএসসি চীন থেকে ৬টি নতুন জাহাজ কিনে। এর মধ্যে একটি ইউক্রেনে গোলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বিএসসির বহরে আগের দুটিসহ মোট ৭টি জাহাজ আছে।

বিএসসি তাদের বহরে আরো ২০টি জাহাজ যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে ৬টি নতুন জাহাজ বহরে যুক্ত হবে। প্রথমে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি মাদার ট্যাংকার, ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। বিদ্যমান জাহাজগুলোর সাথে নতুন জাহাজগুলো যুক্ত হলে ক্রমে ঘুরে দাঁড়ানো বিএসসি দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

বিএসসির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাতারবাড়ি ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশে প্রচুর কয়লা আমদানি হবে। আমদানিকৃত কয়লা যাতে দেশীয় জাহাজ পরিবহন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে বিএসসি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন জাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। জ্বালানি তেল পরিবহনের খাতটিও বিএসসি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশুকে মারধর, সিএমপির কনস্টেবল বরখাস্ত
পরবর্তী নিবন্ধকারো কাছে মাথা নত করব না, এটাই প্রতিজ্ঞা : প্রধানমন্ত্রী