প্রায় ৮শ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য বোঝাই করা দুর্ঘটনা কবলিত ভিয়েতনামের পতাকাবাহী কন্টেনার জাহাজ এমভি হাইয়ান সিটি ‘দুঃসাহসিক’ভাবে উদ্ধার করা হলেও অন্তত দুইশ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। জাহাজটিকে জেটিতে ভিড়িয়ে কন্টেনার খালাস এবং বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর এই আশংকা জোরদার হয়ে উঠেছে। জাহাজটিতে বোঝাই করা ১৮০ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারে সাগরের পানি প্রবেশ করায় পণ্যগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। এ সব কন্টেনারে ইউরোপ–আমেরিকাগামী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
কর্ণফুলী ড্রাইডকের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় আটশ’ কোটি টাকার পণ্য নিয়ে ডুবতে বসা ভিয়েতনামের পতাকাবাহী এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজটিতে মোট ১১শ’ ৫ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে। এর মধ্যে ২১৭টি ২০ ফুটি কন্টেনার এবং ৪৪৪টি ৪০ফুটি কন্টেনার। সর্বমোট ৬৬১টি কন্টেনারের মধ্যে ৭ হাজার ২শ’ টন পণ্য রয়েছে। কন্টেনারগুলোর মধ্যে পণ্য ৮৬টি ২০ ফুটি এবং ৩১৬টি ৪০ ফুটি কন্টেনার পণ্য বোঝাই করা। ১৩১টি ২০ ফুটি এবং
১২৮টি ৪০ ফুটি খালি কন্টেনার রয়েছে জাহাজটিতে। অর্থাৎ জাহাজটিতে সর্বমোট ৭১৮ টিইইউএস পণ্য বোঝাই এবং ৩৮৭ টিইইউএস এমটি কন্টেনার রয়েছে। এমটি কন্টেনারগুলো জাহাজের উপরের দিকে বোঝাই করা হয়। এর মধ্যে সংঘর্ষের শুরুতে ধাক্কায় একটি কন্টেনার ছিটকে সাগরে পড়ে যায়। এতে জাহাজটির কন্টেনার সেটিংস নষ্ট হয় এবং ভারসাম্য হারাতে থাকে। অপরদিকে পোর্টসাইডে কার্গো হোল্ডে পানি ঢুকায় জাহাজটি কাৎ হয়ে যায়। কর্ণফুলী ড্রাইডকের কর্মকর্তারা জানান, কাৎ হয়ে যাওয়া জাহাজটির ড্রাফট কমানো এবং প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ সম্পন্ন করতে জাহাজটি থেকে কন্টেনার নামাতে হবে। তবে সব কন্টেনার নামানোর প্রয়োজন হবে না। জাহাজটির একদিকের ১৪৮ টিইইউএস কন্টেনার নামাতে হবে। এর মধ্যে ২৩টি পণ্য বোঝাই কন্টেনার, বাকিগুলো এমটি। এই কন্টেনারগুলোতে রাখা পণ্যের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে বেশ কয়েকটি খালি কন্টেনার দুমড়ে মুচড়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ১৪৮টি কন্টেনারের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪৭টি কন্টেনার নামানো হয়েছে। এতে জাহাজটির ড্রাফট ১০.৭ থেকে কমে ১০.১ এ উন্নীত হয়েছে। তবে ১৭২ মিটার লম্বা জাহাজটির কার্গোহোল্ডে রাখা কন্টেনারের মধ্যে ১৮০ টি পণ্যবোঝাই কন্টেনার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো কন্টেনারের বেশির ভাগ অংশ পানিতে ডুবে আছে। এ সব কন্টেনারে রাখা অন্তত দুইশ’ কোটি টাকার পণ্য পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে বলে কর্ণফুলী ডক ইয়ার্ডের কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেন, পানিতে নষ্ট হওয়া ১৮০টি পণ্য বোঝাই কন্টেনার নামানোর পর জাহাজটি ড্রাফট ৭.৫ মিটারে উন্নীত হবে। কর্ণফুলী ডক ইয়ার্ডে জাহাজটি ভিড়ানো হলেও উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে মেরামত কাজের পুরোটাই প্রান্তিক বেঙ্গল সেলভেজ করছে বলেও তারা জানান।
এই ব্যাপারে গতকাল প্রান্তিক বেঙ্গল সেলভেজ এন্ড ড্রাইভিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সারওয়ার বলেন, উদ্ধারের পর এখন জাহাজটির মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জাহাজটির মেরামত কাজ সম্পন্ন হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।








