উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬ উপজেলায়। কঙবাজারে ৩ উপজেলায়, বান্দরবানে ২ উপজেলায়, রাঙামাটিতে ৪ উপজেলায় এবং খাগড়াছড়িতে ৪ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কক্সবাজারের তিন উপজেলাতে ভোট হবে ইভিএমে।
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলার ভোট কেন্দ্র গুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে সকল নির্বাচনী সামগ্রী (ব্যালট ছাড়া) নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। আজ ভোর ৬টায় প্রায় কেন্দ্রে প্রশাসনের কঠোর প্রহরায় ব্যালট পৌঁছে যাবে বলে জানান চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী। চট্টগ্রামের ৩ উপজেলার ২৯০টি কেন্দ্রের ২১৬৫টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আজ সকাল থেকে ভোটগ্রহণের জন্য ৬৭৮৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা গতকাল কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিন্দুমাত্র কাউকে ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন। প্রতিটি উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সন্দ্বীপে বিজিবির পাশাপাশি কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১২ প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারমান পদে ৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনের সার্বিক প্রস্ততির ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ আজাদীকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই এই তিন উপজেলা নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
সন্দ্বীপে কোস্টগার্ডের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফোর্স থাকবে। কারণ সীতাকুণ্ড–মীরসরাইয়ে ফোর্স লাগলে আমি তাৎক্ষণিক পাঠাতে পারবো–কিন্তু সন্দ্বীপে তাৎক্ষণিক ফোর্স পাঠানো সম্ভব না–এই কারণে অতিরিক্ত ফোর্স দিয়েছি। গত ৬ তারিখ থেকে সন্দ্বীপে ফোর্স পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মীরসরাই এবং জোরালগঞ্জকে আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়ে সেখানে বাড়তি ফোর্স মোতয়েন করা হয়েছে। কেউ কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের সাহসও করতে পারবে না। দেখার মতো নির্বাচন হবে এবার। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও তিন উপজেলায় ৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৪৪ পৌরসভা ও ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী আজাদীকে বলেন, অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে আগে থেকেই। সন্দ্বীপে কোস্টগার্ডের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও র্যাব, পুলিশ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক উপজেলায় ( যে সব উপজেলায় ভোট হচ্ছে) বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও র্যাবের ফোর্স রয়েছে। পুলিশ–আনসার ছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। দুর্গম কেন্দ্র গুলো ছাড়া অবশিষ্ট ৯৫ ভাগ ভোট কেন্দ্রে ব্যালট যাবে ভোটের দিন ৮ মে।
মীরসরাই উপজেলা : মীরসরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় ভোটার তিন লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯২ হাজার ৭২০ জন ও মহিলা ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৫ জন। উপজেলায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১১৩টি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা : সীতাকুণ্ডে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় ভোটার তিন লাখ ২৪ হাজার ২৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৫২ হাজার ২০৬ জন। এ উপজেলায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৯২টি।
সন্দ্বীপ উপজেলা : সন্দ্বীপ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থী থাকায় এ পদে নির্বাচন হবে না। এ উপজেলায় মোট দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৬ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন, মহিলা ভোটার এক লাখ ১৮ হাজার ৯৮৫ জন। সন্দ্বীপে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৮৫টি।
আমাদের কঙবাজার প্রতিনিধি আহমদ গিয়াস জানান, প্রথম ধাপে কঙবাজারের তিন উপজেলা, সদর, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ভোটগ্রহণ আজ। এই তিন উপজেলার ২০৫টি কেন্দ্রে আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন।
কঙবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন ভোটগ্রহণের কেবল আনুষ্ঠানিকতাই বাকী।
কঙবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কঙবাজার সদরে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ) পদে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান রশিদ মিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কঙবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ২ লক্ষ ২২ হাজার ৯৯৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ১৯ হাজার ২৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭০২ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৮২ টি এবং ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৫৯৮ টি। এরমধ্যে স্থায়ী বুথ ৫৫৪ টি এবং অস্থায়ী বুথ ৪৪টি।
মহেশখালী উপজেলা : মহেশখালী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ) পদে ৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মহেশখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৫৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮৯০ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৫৬৮ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৮৬টি এবং ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৫৭৮টি। এরমধ্যে স্থায়ী বুথ ৫৫৫ টি এবং অস্থায়ী বুথ ২৩টি।
কুতুবদিয়া উপজেলা : কুতুবদিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ) পদে ৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছেন ৯৭ হাজার ১৭০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫১ হাজার ৫৬৯ জন এবং মহিলা ভোটার ৪৫ হাজার ৬০১ জন। কুতুবদিয়ায় মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩৭টি এবং ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ২৫৮টি। এরমধ্যে স্থায়ী বুথ ২৫০টি এবং অস্থায়ী বুথ ৮টি।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, আজ বান্দরবানের সদর উপজেলা ও আলীকদম উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৭১ হাজার ৪৪৪ জন। তার মধ্যে নারী ভোটার ৩৩ হাজার ৮৭৪ জন ও পুরুষ ভোটার হলো ৩৭ হাজার ৫৭০ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৫টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৬৯টি।
অপরদিকে আলীকদম উপজেলায় ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৩২ হাজার ৮০৬ জন। তার মধ্যে নারী ভোটার ১৬ হাজার ২৮৫ জন ও পুরুষ ভোটার হলো ১৬ হাজার ৫২১ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২১টি এবং ভোট কক্ষের ৯৪টি। তবে দুর্গম এলাকা ও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় আলীকদমে ১টি ভোট কেন্দ্রে হেলিকপ্টারযোগে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা নির্বাচন অফিসার এস এম শাহাদাত হোসেন জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন সদরে ৭ জন এবং আলীকদমে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ভোট কেন্দ্রগুলো পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।