১৫ পুকুরসহ ১০০ একর খাস জমি উদ্ধার

সরকার ও বিভিন্ন দলের লোকজনের দখলে ছিল ৭০০ কোটি টাকার এ জমি আগামী সপ্তাহে উদ্ধার হবে পাশের আরো ২০০ একর গড়ে তোলা হবে ম্যানগ্রোভ ফরেস্টসহ বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল

আজাদী প্রতিবেদন ম | শুক্রবার , ১৯ মে, ২০২৩ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর সমুদ্র উপকূল উত্তর কাট্টলীতে গতকাল অভিযান চালিয়ে একশ একর খাস জমি উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন। গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০ টির মতো স্থাপনা। এসব জমির মধ্যে রয়েছে ১৫ টি পুকুর। সবমিলে উদ্ধারকৃত এসব সরকারি সম্পত্তির বাজারমূল্য ৭০০ কোটি টাকা। দশকের পর দশক ধরে সরকারি দলের সাথে মিলে বিরোধী দলের প্রভাবশালী কিছু লোক সরকারের এসব খাস জমি দখলে রেখে ভোগ করে আসছিল। পাশে একই শ্রেণীর আরো দুইশ একর জমি রয়েছে। এর আগে উদ্ধার করা বিশাল আয়তনের জমিও রয়েছে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাটিতে। সবমিলে সমুদ্র উপকূল বেষ্টিত সম্ভাবনাময় ওই এলাকায় সরকারি খাস জমি রয়েছে ৭৫০ একর।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেরিন ড্রাইভের পাশের উক্ত ৭৫০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হবে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সংরক্ষিত বন, সাইক্লিং ট্র্যাক, বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রসহ বণ্যপ্রাণীদের আবাসস্থল।

দখলদারদের কাছ থেকে একশ একর জায়গা উদ্ধারের অভিযানটি পরিচালনা করেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক। সকাল ৯ টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত চলে উদ্ধার কার্যক্রম। ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক আজাদীকে বলেন, সমুদ্র উপকূলীয় উত্তর কাট্টলী এলাকায় বিশাল আয়তনের সরকারি খাস জমি রয়েছে। যেগুলো একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের চোখে পড়ে বিশাল আয়তনের জায়গা বেহাত হওযার বিষয়টি। পরক্ষণেই তিনি পুকুরসহ জমিগুলো উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন অত্র এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ১৫ টি পুকুরসহ ১০০ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়। গুড়িয়ে দেওয়া হয় ছোটবড় প্রায় ৩০ টির মতো স্থাপনা। তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত এসব জমিতে দখলদাররা মাছ চাষ, গরুর খামারসহ নানা ব্যবসা করে আসছিলেন। পার্কের মতো করে বিনোদন স্পটও করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত একশ একর এই জায়গার মূল্য প্রায় সাতশ কোটি টাকা বলে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে থাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা যাতে সেখানে ফের প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ‘অনুপ্রবেশ দণ্ডনীয় অপরাধ’ লিখা ১০ টি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। খাস জমি দীর্ঘদিন দখলে রাখাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানান।

আশেপাশের স্থানীয়রা জানান, দখলদারদের মধ্যে সরকারি দল ও বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী লোকজন রয়েছেন। তারা মিলেমিশে এসব জমি ভোগ দখল করছেন। দলীয়ভাবে তাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও এ ব্যাপারে তারা সব সময় একজোট বলে জানান তারা।

গড়ে তোলা হবে ম্যানগ্রোভ ফরেস্টসহ বন্যপ্রাণীদের জন্য আবাসস্থল :

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, সীতাকুণ্ড এলাকায় সম্প্রতি প্রায় ১৯৪ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। ওইসব জমি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তর কাট্টলীর সমুদ্র উপকূলে থাকা খাস জমি নিয়েও রয়েছে পরিকল্পনা। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে (গতকাল) আমরা ১৫ টি পুকুরসহ প্রায় ১০০ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করেছি। একটি চক্র এসব জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করে আসছিল। এখন থেকে ওই জায়গা সরকারের দখলে থাকবে। কেউ এ জায়গায় অনুপ্রবেশ করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগর ও উপজেলায় বেদখল হওয়া সরকারি খাস জমি উদ্ধারেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। জেলা প্রশাসক জানান, মেরিন ড্রাইভের পাশের উদ্ধারকৃত জমিসহ প্রায় ৭৫০ একর জমি নিয়ে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সংরক্ষিত বন, সাইক্লিং ট্র্যাক, বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনীয় কার্যকলাপের পর কাজ শুরু করা হবে। তিনি আরও বলেন, উদ্ধার করা জায়গায় অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞাসহ ১০টি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এরপরেও যদি অবৈধভাবে কেউ এ জায়গায় প্রবেশ বা দখল করার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উত্তর কাট্টলীতে গতকাল পরিচালিত জেলা প্রশাসনের এই অভিযানে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ও সিএমপির একটি টিম সহযোগিতা করে।

উল্লেখ্য, উদ্ধারকৃত একশ একরের এই জমি নিজেদের বলে দাবি করেছেন স্থানীয় কিছু লোকজন। বৈধ মালিকানা রয়েছে দাবি করে তারা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিভিন্ন কাগজপত্রও দেখান। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য হলোবিএস ও দিয়ারা জরিপ অনুযায়ী এসব জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। অবৈধভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা যুগ যুগ ধরে ভোগ করে আসছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাম-রুবেলা নির্ণয় হবে চট্টগ্রামে
পরবর্তী নিবন্ধকারামুক্ত হলেন নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ