১৫০ কিলোমিটার রোডমার্চ তিনটি পথসভা

দাবি আদায়ে বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আজ

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:২৭ পূর্বাহ্ণ

১০ দফা থেকে সরে এসে সরকারের পদত্যাগে বিএনপি ‘এক দফা’ দাবি ঘোষণা করে গত ১২ জুলাই। এ দাবি আদায়ে ১৮ জুলাই থেকে কয়েক ধাপে সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। আগামী মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

জানা গেছে, এক দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করবে বিএনপি। নগরে পৌঁছার পর বিকেল ৩টার দিকে লাভ লেইনস্থ নূর আহম্মদ সড়কে সমাবেশ করবে দলটি। সমাবেশ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি আদায়ে সামনে বিএনপি কী করবে তার ঘোষণা দেবেন। তাই আজকের রোডমার্চটি কেবল বিএনপির চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মাঝে কৌতুহল তৈরি করেনি, সারাদেশের নেতাকর্মীরা এ রোডমার্চ নিয়ে আগ্রহী। ওই জায়গা থেকে আজকের রোডমার্চটি দলটির কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে এখনো তারাও অবগত নন। তবে ‘কঠোর’ কর্মসূচি আসার ইঙ্গিত রয়েছে। এক্ষেত্রে কর্মসূচিগুলো ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ, মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, অবরোধ বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার মত কর্মসূচি থাকতে পারে। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছরের (২০২২) আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে ‘যুগপৎ’ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। যা গত ১২ জুলাই রাজধানীর নয়া পল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ‘এক দফা’ দাবিতে পরিণত হয়। এর আগে দাবি আদায়ে বিভাগীয় সমাবেশ, গণমিছিল, গণ অবস্থান কর্মসূচি, তারুণ্যের সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ, থানায় থানায় পদযাত্রা, মানববন্ধন ও প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দলটি। রোডমার্চ ‘সফল’ করতে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আজকে রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সকাল ১০টায় কুমিল্লা থেকে রাওয়ানা দিবেন তারা। শুরুতে সেখানে একটি পথসভাও হবে। এরপর ফেনীর মহিপাল ও মীরসরাই সদরে আরো দুইটি পথসভা হবে। কুমিল্লা থেকে ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবেন তারা। শহরে রোডমার্চের পথ হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি গেইট, কর্নেলহাট, একে খান মোড়, ফয়’স লেক, জাকির হোসেন রোড, খুলশী থানার সামনে হয়ে জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড়, আলমাস সিনেমা হল হয়ে কাজীর দেউড়ি মোড় হয়ে সমাবেশস্থল পর্যন্ত।

জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর রোডমার্চের বিষয়টি অবহিত করে সিএমপিতে নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি দেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। এতে কাজীর দেউড়ি মোড়ে সমাবেশ করার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে সিএমপি সেখানে আপত্তি জানায়। সর্বশেষ সিএমপির সঙ্গে আলোচনা করে গতকাল বিকেলে নগরের সমাবেশস্থল পরিবর্তন করে নূর আহমদ সড়কে নিয়ে আসা হয়। এক্ষেত্রে নেভাল মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চ করার কথা সমাবেশের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি ও মীরসরাই উপজেলার নেতাকর্মীরা মীরসরাইয়ের সমাবেশে যোগ দেবেন। এরপর তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরের সঙ্গে চট্টগ্রামে আসবেন। পথে যোগ দেবেন সীতাকুণ্ডের নেতাকর্মীরা। নগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, কঙবাজার, রাঙামাটি এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলার কয়েকটি উপজেলার নেতাকর্মীরা আলাদাভাবে সমাবেশস্থলে আসবেন।

রোডমার্চ উপলক্ষে গঠিত কমিটির দলনেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়বে বিএনপি।

রোডমার্চের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক দফা আন্দোলন চলছে। এর অংশ হিসেবে রোডমার্চ। আবার এখান থেকেই দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তাই এ রোডমার্চের গুরুত্ব অনেক। প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, সামগ্রিক প্রস্তুতি ভালো। দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণেরও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষও রোডমার্চে যোগ দিতে প্রস্তুত।

মীরসরাইয়ে আওয়ামী লীগবিএনপির সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানিকে কেন্দ্র করে রোডমার্চে কোনো সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, তেমন শঙ্কা করছি না। আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা যেন সংযত আচরণ করে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করে।

রোডমার্চের সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে বলেন, এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি অংশ হিসেবে এ রোডমার্চ। তাই এটার গুরুত্ব অনেক। রোডমার্চ সফল করতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি পথসভায় এবং নগরের সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। কোথাও বাধা পাওয়ার বা সংঘাতের আশংকা রয়েছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, তেমন কোনো শঙ্কা নেই। যদিও কোথাও বাধা দেয় বা উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিটি থানায় ও ওয়ার্ডে গত কয়েকদিন ধরে প্রস্তুতি সভা করেছি। লিফলেট বিতরণ করেছি। এতে সাধারণ মানুষের মাঝেও রোডমার্চ ঘিরে আগ্রহ দেখেছি। সবার অংশগ্রহণে রোডমার্চ সফল হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহসিন কলেজে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের হাতাহাতি
পরবর্তী নিবন্ধসুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নয়াদিল্লিতে আলোচনা করেছেন হাসিনা-বাইডেন : হোয়াইট হাউস