১৩ লাখ টাকায় বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নিয়োগ!

| বৃহস্পতিবার , ৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে ১৩ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে এক বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীর স্বামী মো. রুবেল মিয়া গত ৩১ অক্টোবর ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের একাধিক অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে। তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, বিদ্যালয়ের ঘটনায় দুইটি পক্ষ পৃথক পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্তে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো অভিযোগ দু’টি মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়নি। খবর বাংলানিউজের।
সূত্র জানায়, বিগত ২৬ অক্টোবর চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পদগুলো হল- অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, অফিস সহায়ক, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী। প্রতিটি পদের বিপরীতে একজন নিয়োগের সুযোগ থাকলেও চারটি পদের বিপরীতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় ৩০ জন চাকরি প্রার্থী। এরমধ্যে, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে আবেদন করেছিলেন ১৫ জন। তবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন সাতজন প্রার্থী।
চাকরি প্রার্থী শারমিন সুলতানা স্বর্ণার অভিযোগ, আমাকে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি শহীদুল ইসলাম সরকার ও তার ছেলে রিয়াজুল ইসলাম নাদিম। এখন টাকা ফেরত চাওয়ায় তারা টালবাহানা করছে। স্বর্ণার স্বামী রুবেল মিয়া জানান, চাকরি না হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর ঘুষের টাকা ফেরত চেয়েছিলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিয়োগ বোডের্র সভাপতির ছেলে নাদিম আমাকে হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রুবেল আরও জানায়, প্রতারণার মাধ্যমে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও তার ছেলে স্থানীয় কামারিয়া এলাকার আজাহারুল ইসলাম নামের অপর এক চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা ঘুষ নেয়। কিন্তু তাকেও চাকরি দেওয়া হয়নি। অবশেষে ১৩ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে স্থানীয় সাধুপাড়া এলাকার আ. কদ্দুছের ছেলে মো. শফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি রুবেলের।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভুক্তভোগী আজাহারুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিয়োগ কমিটি ওই বিদ্যালয়ের চারটি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদে ১০-১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তদন্ত করলেই এসবের সত্যতা মিলবে। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি শহীদুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে চাকরি দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এদিকে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে এক চাকরি প্রার্থীর ঘুষ লেনদেনের একাধিক অডিও রেকর্ড বাংলানিউজের কাছে এসেছে। ওই রেকর্ডে তাদের কথোপকথনে ঘুষ লেনদেনের স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তবে অডিও রেকর্ডে চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে কথোপকথনের সত্যতা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিককুর রহমান বলেন, তারা টাকা নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি বিষয়টি এড়িয়ে যাবার জন্যই এসব বলেছি। অপরদিকে, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মো. শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ঘুষ দিয়ে চাকরি নেইনি। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরি পেয়েছি।
এ বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঘটনার বিষয়ে শুনেছি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম এমডি কোর্স চালু হচ্ছে বিআইটিআইডিতে
পরবর্তী নিবন্ধতৈয়্যবিয়া নজিরিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন