১৩ জনকে লিগ্যাল নোটিশ চাওয়া হবে কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ

আজাদী প্রতিবেদন

| বুধবার , ২০ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএ’র ‘চরম অবহেলা’র কারণেই নগরের মুরাদপুরে নালায় পড়ে সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ এবং আগ্রাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়ার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে সিডিএ চেয়ারম্যান ও চসিক প্রধান নির্বাহীসহ ১৩ জনকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে সাতদিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ‘চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ (সিসিবি ফাউন্ডেশন) এর পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম ও আইনজীবী ইশরাত হাসান এই নোটিশ পাঠান। সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকাই চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে নগরবাসীর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘সালেহ আহমেদ এবং সাদিয়ার মৃত্যু কর্তব্যে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। নোটিশ প্রাপকরা অবহেলাজনিত এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবেন না। নোটিশের জবাব নির্ধারিত সময়ে দিতে ব্যর্থ হলে বা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান না করলে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ এর অধীনে সুপ্রীম কোর্টের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা করে চাওয়া হবে। ভবিষ্যতে সাদিয়া ও সালেহ আহমেদের নালায় পড়ে মৃত্যুর মত দুর্ঘটনা রোধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার রিপোর্ট প্রকাশ করতে বলা হয়েছে নোটিশ গ্রহীতাদের। যাদেরকে নোটিশ দেয়া হয় তারা হচ্ছেন- স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, সিডিএ চেয়ারম্যান, চসিকের প্রধান নির্বাহী ও সচিব, ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের ডেপুটি ডাইরেক্টর ও অ্যাসিসটেন্ট ডাইরেক্টর, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী, সিডিএ সচিব, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এবং ডবলমুরিং থানার ওসি। বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নালা বা ড্রেন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। সেটার দায় সিডিএ এড়াতে পারে না। সিটি কর্পেরেশন ও সিডিএ দুর্ঘটনা রোধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা সাত দিনের মধ্যে জানাতে হবে। দুর্ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কী না, হলে তার অগ্রগতি প্রতিবেদন সাতদিনের মধ্যে জানাতে হবে ডবলমুরিং থানার ওসি এবং সিএমপি কমিশনারকে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে নালায় পড়ে নিঁেখাজ হন সালেহ আহমেদ। গতকাল পর্যন্ত তার খোঁজ মিলেনি। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে মারা যান সাদিয়া। এ দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ি কে সে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও চসিক ও সিডিএ কেউ দায় স্বীকার করেনি। বরং পরষ্পরকে দোষারোপ করেন দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা।
সালেহ আহমেদ ও সাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ও আইনজীবী ইশরাত হাসানের দেয়া নোটিশেও দায় এড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে নোটিশে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পারি, চসিক কিংবা সিডিএ সালেহ আহমেদ ও সাদিয়ার মৃত্যুতে দায় নিতে চাইছে না। সরকারি দুটি সংস্থাই একে অপরকে দোষ দিচ্ছে। চসিক বলছে, দুদিকে ফুটপাত করলেও খালের মুখটি অরক্ষিত রেখেছে সিডিএ। তাই এর দায় সিডিএ’র। আবার সিডিএ বলছে, খালের মালিকানা চসিকের। তাই খালের মুখে সুরক্ষা নিশ্চিতের দায়িত্বও তাদের।
নালা ও খালে পড়ে একের পর এক মৃত্যুতে নগরবাসী ক্ষুব্ধ উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, দায় এড়ানোর প্রবণতা প্রমাণ করে যে, সেবা সংস্থার মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে নগরবাসীর ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। নোটিশে দুজনের মৃত্যুকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে বলা হয়, এ ঘটনায় চসিক ও সিডিএ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা জানাতে বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে বিএনপির ৫ নেতা আটক, প্রতিবাদ
পরবর্তী নিবন্ধকুমিল্লার মূল অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে