১৩শ যাত্রী নিয়ে গভীর সমুদ্রে আটকে যায় ‘বে ওয়ান’

সেন্টমার্টিন থেকে ৫ ঘণ্টার যাত্রার সময় লাগল ১৪ ঘণ্টারও বেশি অন্য জাহাজে করে পৌঁছায় কক্সবাজারে যাত্রীদের ভোগান্তি-দুর্ভোগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন জলপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ ‘বে ওয়ান’ এর যাত্রীরা সেন্টমার্টিন থেকে ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পর পৌঁছাল কক্সবাজারে। প্রায় ১৩শ যাত্রী নিয়ে জাহাজটি মঙ্গলবার বিকাল ৩ টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসার পর রাত ৯টার দিকে গভীর সমুদ্রে আটকে যায়। পরে বার আউলিয়া নামের একটি জাহাজে করে যাত্রীদের গতকাল বুধবার ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে নিয়ে আসা হয়। ৫ ঘণ্টার যাত্রার সময় লাগল ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময়।

যাত্রীরা জানান, বে ওয়ান জাহাজটি মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দুপুরে গন্তব্যে পৌঁছায়। বিকাল ৩টার দিকে ফিরতি পথে কক্সবাজার শহরে আসার সময় গভীর সাগরে জাহাজটি আটকে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং বয়স্ক মানুষের ভোগান্তি ছিল বেশি। যাত্রীদের অভিযোগ, তাদের অনেকেই বসার জায়গা না পেয়ে ১৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে সমুদ্রযাত্রা করেছেন। জাহাজের মাত্র ১৫ শতাংশ যাত্রী খাবার পেয়েছেন। জাহাজ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অসহযোগিতা নিয়ে তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ঢাকা শামীমা সুলতানা নামের এক যাত্রী বলেন, আগের দিন ভোর ৫টায় আমরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য ঘাটে এসেছিলাম। আর ফিরলাম পরদিন ভোর ৫ টায়। চব্বিশ ঘণ্টা এভাবেই চলে গেল। সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থান করে দেখার সুযোগ পেলাম মাত্র ৪৫ মিনিট। ঢাকা থেকে আসা আরেক দম্পতি অভিযোগ করেন, সমুদ্র উত্তাল ছিল, এ সময় বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করেনি। সেই সঙ্গে তিনটি আলু সিংগারার দাম রাখা হয়েছে ১০০ টাকা, খিঁচুড়ির ২৫০ টাকা দাম রাখা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

অপর এক পর্যটক জানান, তিনি সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছেন কেবিনের, তাকে খাবারও দেওয়া হয়নি। তার স্ত্রী জানান, বাচ্চাদের নিয়ে রাতভর সমুদ্রে ভয়াবহ সময় পার করেছি। ট্যুর অপারেটর জসিম উদ্দিন শুভ বলেন, একদিকে জাহাজে হয়রানি, অন্যদিকে বাসের টিকেট মিস করায় অনেকে অর্থ সংকটে পড়ে যান। অনেকে যথাসময়ে কক্সবাজারে পৌঁছাতে না পেরে অফিস মিস করেছেন। পর্যটকরা জানান, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও বার আউলিয়া নামের দুটি জাহাজের টিকেট নেওয়া যাত্রীদের বে ওয়ান জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী ক্রুজ লাইনের কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নয়, জোয়ার ভাটা জনিত কারণে গভীর সাগরে আটকে পড়েছিল বেওয়ান জাহাজটি। পরে কক্সবাজার থেকে বারো আউলিয়া জাহাজে করে গভীর সমুদ্র থেকে যাত্রীদের কক্সবাজার ঘাটে ফেরত আনতে সময় লেগেছে। তিনি বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সব যাত্রী নিরাপদে ফিরেছে। যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলেই লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, জাহাজে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ছিল।

সব যাত্রীর খাবার না পাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইকে খাবার দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম নেয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাহাজের খাবারের দোকান কর্তৃপক্ষ অন্যজনকে ভাড়া দিয়েছে, এখানে জাহাজ কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই।

প্রসঙ্গত: নাফ নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুটো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করে। তবে জাহাজ দুটির বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার নানা অভিযোগ শোনা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপের ঝড়ে কাঁপলো
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতা