১২৫ থেকে বেড়ে বরাদ্দ ১৭৫ টাকা

সরকারী হাসপাতালে রোগীর খাবার ।। প্রায় দশ বছরের মাথায় রোগীপ্রতি বরাদ্দ ৫০ টাকা বাড়ল

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের খাবার (পথ্য) বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগ জারিকৃত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৬ অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ পরিচালিত দেশের সকল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের (নন-কোভিড) খাবার সরবরাহের জন্য পথ্য বরাদ্দ বাবদ রোগী প্রতি দৈনিক ১২৫ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকায় উন্নীতকরণে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। যদিও এ বিষয়ে আবশ্যিক সকল বিধি-বিধান ও আর্থিক নিয়মাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদেশে আরো বলা হয়, সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে এ ব্যয় নির্বাহ করতে হবে। এর মাধ্যমে হাসপাতালগুলোতে রোগী প্রতি খাবার বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ৫০ টাকা বাড়ল। যদিও অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পর এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ (জিও) জারি করবে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশের পরপরই নতুন এ বরাদ্দ কার্যকর হবে।
প্রসঙ্গত, হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে (ইনডোরে) ভর্তি থাকা প্রত্যেক রোগীকে সকালে ও বিকালে নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালগুলোতে একজন রোগীর খাবার বাবদ (নাস্তা ও দুই বেলা খাবার) দৈনিক বরাদ্দ ছিল ৭৫ টাকা। ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট ৭৫ টাকা থেকে রোগী প্রতি বরাদ্দ ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হিসেবে ওই সময় মাথাপিছু বরাদ্দ ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৩ সালের পর প্রায় দশ বছরের মাথায় এবারও রোগী প্রতি বরাদ্দ ফের ৫০ টাকা বাড়ানো হল। যদিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ দেশের একাধিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে রোগী প্রতি দৈনিক এ বরাদ্দ ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। হাসপাতালগুলোর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দৈনিক এ বরাদ্দ ২৫০ টাকা নির্ধারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সর্বশেষ রোগী প্রতি দৈনিক বরাদ্দ ১৭৫ টাকায় উন্নীতকরণে সম্মতি দিল অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশটি সম্পর্কে শুনেছেন জানিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, আমরা রোগী প্রতি আরো বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এ বরাদ্দ ১৭৫ টাকায় উন্নীতকরণে অনুমোদন দিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশ জারির পরই নতুন বরাদ্দ কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে দৈনিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। ভর্তি থাকা রোগীদের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে পথ্য (সকালে ও বিকেলে নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার) সরবরাহের দায়িত্ব পায় ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের কারণে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পথ্য সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করে একযোগে চিঠি দেয়। এতে করে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের খাবার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। গত ১৬ আগস্ট চমেক হাসপাতাল পরিচালক বরাবর একজোটে চিঠি দিয়ে খাদ্যপণ্য সরবরাহে অপারগতা জানায় এ চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চিঠিতে বাজারে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের কারণে সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় উল্লেখ করে এ অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এ সংক্রান্ত চিঠি গত ১৭ আগস্ট হাতে পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও কার্যাদেশ প্রদানকালীন চুক্তি মোতাবেক সরবরাহ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই মর্মে ২৩ আগস্ট ফিরতি চিঠিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে গত ২৭ আগস্ট দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘চমেক হাসপাতাল : আড়াই হাজার রোগীর খাবার সরবরাহে অনিশ্চয়তা/খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্য-একজোটে অপারগতা চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কার্যাদেশ প্রদানকালীন এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি মোতাবেক সরবরাহ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই দাবি করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান ওই প্রতিবেদনে বলেন, নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। চুক্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এসব খাদ্যপণ্য সরবরাহে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের (আগের প্রতিষ্ঠানগুলোর) সরবরাহ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা চিঠির মাধ্যমে এই চার প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিয়েছি।
ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অপারগতা সংক্রান্ত চিঠির জবাবে গত ২৩ আগস্ট চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে এ চিঠি দেয়া হয়। বিধি ও শর্ত অনুযায়ী দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার জন্য এ সংক্রান্ত আবেদন বিবেচনা করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে কার্যাদেশের শর্তাবলী ও নন-এমএসআর দরপত্রের নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী জনস্বার্থে হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন পথ্য সরবরাহে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া এ চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও পাঠানো হয়। পরে রোগীদের পথ্য বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ৩০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাবনা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে গত ২৮ আগস্ট এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাঠানো হয়।
এদিকে, চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিঠির প্রেক্ষিতে রোগীদের পথ্য সরবরাহ এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর খুনি শাহরিয়ার রশিদের জামাতার ৭ বছর জেল
পরবর্তী নিবন্ধপিছিয়ে গেছে সাড়ে ৪০ কিমির সংস্কার কাজ