প্রচন্ড গরমকে উপেক্ষা করে সাবলীল জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। তিন অভিজ্ঞ তামিম, মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিকের দারুণ হাফ সেঞ্চুরির পর মিরাজ, মোস্তাফিজদের দারুণ বোলিং টানা দশ ম্যাচ পর জয় পেল বাংলাদেশ। সাকিবের ফেরাটা খুব বেশি ভাল না হলেও একেবারে মন্দ হয়নি। সব মিলিয়ে ৩৩ রানে সহজ জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। শ্রীলংকার তরুণ দলটি লড়াই করার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার সাথে পেরে উঠেনি। ফলে হার দিয়ে সিরিজ শুরু করতে হলো লংকানদের।
বাংলাদেশ দলের টপ এবং মিডল অর্ডারে লিটন, মিঠুন এবং সাকিব পারেননি দলের পুঁজিতে সহায়তা দিতে। তারপরও তামিম-মুশফিকরা খেলেছেন দায়িত্ব নিয়ে। আর মিরাজ-মোস্তাফিজরা ব্যাটসম্যানদের সে পুঁজিকে পরিণত করলেন নির্ভরতা হিসেবে। যার মিলিত ফসল দারুণ স্বস্তির এক জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি এবং সবশেষ শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই টেস্টে বাংলাদেশ ছিল জয়হীন। অবশেষে সব ফরমেট মিলিয়ে দশ ম্যাচ পর এলো স্বস্তির জয়। আর এই জয়টি হন্য হয়ে খুঁজছিল বাংলাদেশ দল।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই ধাক্কা খায়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেন লিটন দাশ। এরপর সাকিব আল হাসান তার প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে নামলেও সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৪০ রান। সাকিব ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন ১৫ রান করে। তবে একপ্রান্তে অবিচল ছিলেন তামিম। দুই উইকেট হারানোর চাপটা বেশ ভালই সামাল দেন তামিম এবং মুশফিক। দুজন মিলে ৬৪ বলে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের ৫১তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন টাইগার অধিনায়ক। হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর আর এগুতে পারেননি তামিম। দলীয় ৯৯ রানের মাথায় ফিরেন তামিম। ফেরার আগে ৭০ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন টাইগার দলপতি। সে ধাক্কা না সামলাতেই প্রথম বলে ফিরেন মিঠুন। রানের খাতা খোলা হয়নি তারও। সে সাথে নষ্ট করে আসেন একটি রিভিউ। এরপর দলের হাল ধরেন মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ। এ জুটিতে ৪৩তম ওভারে দলীয় ২০০ রান পূরণ করে বাংলাদেশ। এরই মাঝে মুশফিক তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪০তম হাফ সেঞ্চুরি। মাহমুদউল্লাহও হাফ সেঞ্চুরি করে ফিরেন। ৭৬ বলে ৫৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। যেখানে ছিল ২ চার ও ১টি ছয়ের মার। কিন্তু মুশফিক এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি তার। ৮৭ বলে ৮৪ রানের উজ্জ্বল ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে সানদাকানের বলে। যেখানে ছিল ৪টি চারের সঙ্গে ১ ছয়ের মার। এর আগে অবশ্য মাহমুদ উল্লাহর সঙ্গে মুশফিকের জুটিটি ছিল ১০৯ রানের। শেষদিকে আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন অপরাজিত থাকেন ৯ বলে ১৩ রান করে। আর তাতে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৫৭ রানে। শ্রীলংকার পক্ষে ধনঞ্জয় ডি সিলভা ১০ ওভারে ৪৫ রান খরচায় নিয়েছেন ৩টি উইকেট।
২৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা শ্রীলংকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৩০ রানে। মিরাজের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেন গুনাতিলকা। এরপর মোস্তাফিজের আঘাতে ফিরেন নিশানকা। কুশল মেন্ডিস এবং কুশল পেরেরা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও তাদের বেশিক্ষণ থাকতে দেননি সাকিব। ৪১ রানের এই জুটি ভাঙেন সাকিব ২৪ রান করা মেন্ডিসকে পিরিয়ে। এরপর শুরু হয় মিরাজের ভেল্কি। একে একে তিন লংকান ব্যাটসম্যানকে ফেরান এই স্পিনার। যার প্রথম শিকার কুশল পেরেরা। ৩০ রান করে ফিরেন লংকান অধিনায়ক। এরপর দ্রুত ধনঞ্জায়া এবং বান্দারা ফিরলে ১০২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলংকা। তবে ঠিক তখনই অসাধারন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হাসারাংকা। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন সানাকা। যদিও এ দুজনের ৪৭ রানের জুটিতে ৩৩ রানই হাসারাংকার। এজুটি ভাঙেন সাইফুদ্দিন। এরপর হাসারাংকাকে সঙ্গ দেন ইসুরু উদানা। বেশ ভয়ংকর হয়ে উঠা এই জুটি ভাঙেন সাইফুদ্দিন। এবার তার শিকার হাসারাংকা। ৬০ বলে ৩টি চার এবং ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৭৪ রান করা হাসারাংকাকে ফিরিয়ে যেন স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন সাইফুদ্দিন টাইগার শিবিরে। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজের বলে সামিরা ফিরলে ২২৪ রানে থামে লংকানদের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে ৪ উইকেট নিয়ে সফল বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ। মোস্তাফিজ ৩ উইকেট নিয়ে নিজের সেরা সময়ের ইঙ্গিতটা দিয়ে রাখলেন। ২টি উইকেট জমা পড়েছে সাইফুদ্দিনের পকেটে।