মুক্তি পেলেন রোজিনা

‘সবাইকে দায়িত্বশীল হতে বলেছে আদালত’

| সোমবার , ২৪ মে, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

সচিবালয় থেকে সরকারি ‘নথি চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে গ্রেপ্তার হওয়ার ছয় দিন পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। গতকাল রোববার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে বেরিয়ে আসেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা। খবর বিডিনিউজের।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ইমেইলযোগে রোজিনার জামিনের কাগজপত্র এসে পৌঁছায়। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে রোজিনার স্বজনদের বহনকারী দুটি মাইক্রোবাস কাশিমপুর কারাগারের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। পরিবারের ১৬ সদস্যের দুটি দল আলাদা গাড়িতে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে রোজিনা ইসলামের জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লা গতকাল সকালে ৫ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে রোজিনার জামিন মঞ্জুর করেন। রোজিনাকে আনতে কাশিমপুর যাওয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তার দেবর জাহিরুল ইসলাম, প্রিন্স জাকারিয়া, বোন লীনা আক্তার, ভাগ্নি মারিয়া রাউকি, ননদ রুজিনা আক্তার প্রমুখ। এর আগে জামিনের খবর পাওয়ার পরপরই গাজীপুরের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ব্যানার ও ফুল নিয়ে কাশিমপুর কারাগারের বাইরে উপস্থিত হন। তবে উপস্থিত সাংবাদিকরা এ সময় কথা বলার চেষ্টা করলেও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সেই সুযোগ হয়নি।
রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে গত ১৭ মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডিবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। রোজিনা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর তার সহকর্মীরা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘অনিয়-দুর্নীতি’ নিয়ে প্রতিবেদন করায় তাকে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে ব্রিটিশ আমলের এক আইন ব্যবহার করে। সচিবালয়ে আটকে রাখার সময় রোজিনাকে ‘শারীরিকভাবে হেনস্তা’ করা হয় বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
সবাইকে দায়িত্বশীল হতে বলেছে আদালত : রোজিনার আইনজীবী
অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে জামিন দেওয়ার আদেশে বিচারক সবাইকে ‘দায়িত্বশীল’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী। আদেশের পর রোজিনার অন্যতম আইনজীবী আশরাফ উল আলম বলেন, জামিন মঞ্জুরের আদেশে বিচারক বলেছেন, রাষ্ট্র, সমাজ, আইন আদালতের প্রতি আমরা যে যেখানেই আছি, আমাদের কিছু দায় দায়িত্ব রয়েছে। ভবিষ্যতে গণমাধ্যমও যেমন দায়িত্বশীল আচরণ করবে, আমরাও যে যেখানে আছি তেমনি দায়ত্বশীল আচরণ করব। কোনো কাজে যেন রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়।
ভার্চুয়াল শুনানি হওয়ায় রোজিনাকে এদিন আদালতে আনা হয়নি। রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। তবে বিচারক সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে বিষয়টি গতকাল আদেশের জন্য রাখেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু গতকাল শুনানিতে বলেন, সাংবাদিক রোজিনাকে জামিন দেওয়া হলে তাদের আপত্তি নেই। তবে তার পাসপোর্ট যেন জমা রাখা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ওই শর্ত নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকার কথা জানালে বিচারক অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
রোজিনার এ জামিনের মেয়াদ হবে মামলার পরবর্তী তারিখ অর্থাৎ ১৫ জুলাই পর্যন্ত। ওইদিনই এ মামলায় পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেদিনের ঘটনার বিষয়ে একটি ‘ডকুমেন্ট’ আদালতে জমা দিয়েছেন। তবে তাকে কী আছে, সে বিষয়ে কিছু তিনি বলেননি।
এ বিষয়ে আসামির আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, আমাদের ওই ডকুমেন্ট দেখনো হয়নি।
এদিকে রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি মোবাইল ফোন পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর আবেদন করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।
জামিন আদেশের পর আদালতে উপস্থিত প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পুরো সাংবাদিক সমাজ, ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, ডিইউজে, বিএফইউজে, মানবাধিকার কর্মীরা যেভাবে রোজিনার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন, তাতে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এমন কেউ ছিলেন না যে রোজিনার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবাই একত্র হয়েছিলেন। এটা অভূতপূর্ব।
আনিসুল হক বলেন, সরকার ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্কটি দ্বান্দ্বিক। তথ্য অধিকার আইনের ভূমিকাতেই এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্রের দুর্নীতি কমায়। শুধু জামিন নয়, মামলাটির সুষ্ঠু বিচার করে নিষ্পত্তি করা হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাইকারিতে বেড়েছে চালের দাম
পরবর্তী নিবন্ধ১০ ম্যাচ পর এলো জয়