১০ দিন পর শেষ ভোট গণনা

| রবিবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ

মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে পুরোপুরি ঘুরে গেল আমেরিকার জনতার রায়। গতকাল শনিবার নর্থ ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়ায় ভোটের গণনা-পুনর্গণনা পর্ব শেষ হয়েছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত চূড়ান্ত ফল জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ঘোষিত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী তথা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝুলিতে ২৩২টি। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত সরকারি ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষিত হয়নি। ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ ভোটের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৭০ আগেই ছুঁয়ে ফেলায় জয়ী ঘোষিত হন বাইডেন।
২০১৬ সালের ভোটের ফল ছিল ঠিক উল্টো। সে বার ইলেক্টোরাল কলেজের ৩০৬টি ভোট রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের পক্ষে গিয়েছিল। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পেয়েছিলেন ২৩২টি। অর্থাৎ দু’বারই ‘ম্যাজিক ফিগার’-এর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে, এবং প্রতিদ্বন্দ্বীকে একই ব্যবধানে হারিয়ে ‘দৌড়’ শেষ করলেন জয়ী প্রার্থী।
পুনর্গণনার পরেও জর্জিয়ায় জিতেছেন বাইডেন। ওই প্রদেশের ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোটের দখল নিয়েছেন তিনি। যদিও দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মোট প্রাপ্ত ভোটের (আমেরিকার নির্বাচনী পরিভাষায় ‘পপুলার ভোট’) ব্যবধান সামান্য। বাইডেন ৪৯.৫ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৯.২ শতাংশ। অন্য দিকে, নর্থ ক্যারোলিনার ১৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। ওই প্রদেশে ৫০ শতাংশ পপুলার ভোট পেয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
সামগ্রিক ভাবে পপুলার ভোটের হিসেবে অবশ্য পিছিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৪ সালেও পপুলার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। সে বার আমেরিকার ভোটদাতাদের ৪৮ শতাংশ সমর্থন করেছিলেন হিলারিকে। ৪৬ শতাংশের একটু বেশি ভোট পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের পাটিগণিতে জয়ী হন ট্রাম্প। এ বার পপুলার ভোটে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বাইডেন। প্রায় ৫১ শতাংশ ভোটদাতার সমর্থন পেয়েছেন তিনি। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৭ শতাংশের সামান্য বেশি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনও রাজ্যে যে প্রার্থী জেতেন, গোটা রাজ্যের সমস্ত ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট জমা হয় তার অ্যাকাউন্টে। তাই জনমত সমীক্ষায় কোনও প্রদেশে কোনও দল ৫ শতাংশ বা তার বেশি ভোটে এগিয়ে থাকলে দু’দলের কাছেই প্রচারে কিছুটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে সেই প্রদেশ। বরং গুরুত্ব পায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ‘সুইং’ প্রদেশগুলি। যেখানে যেখানে ২-৩ শতাংশ পপুলার ভোট এ দিক-ও দিক হলেই পাল্টে যেতে পারে ফল। জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনার পাশাপাশি টেঙাস, ফ্লোরিডা, পেনসিলভেনিয়া, আইওয়ার মতো গোটা দশেক প্রদেশ রয়েছে এই তালিকায়। এ বার যার অধিকাংশতেই জয়ী হয়েছেন বাইডেন। ফলে ইলেক্টোরাল কলেজে অনেকটাই এগিয়ে তিনি।
ভোট বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বার বার জনমনে বিদ্বেষকে খুঁচিয়ে তুলে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করলেও তাতে সাড়া দেননি আমেরিকার ভোটদাতাদের বড় অংশই। বিশেষত শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত ভোটদাতারা ভাল চোখে দেখেননি গত ৪ বছরে ট্রাম্প সরকারের নানা ‘জনবিরোধী’ পদক্ষেপকে। যদিও ভোটের ফল জানাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলের ভোটের হিসেবে বাইডেনের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। সাধারণত আমেরিকার গ্রামাঞ্চলের ভোটদাতাদের সমর্থন রিপাবলিকান পার্টির দিকেই থাকে। ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে বাইডেন করোনা অতিমারি সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুললেও গ্রামাঞ্চলের ভোটদাতারা তা উপেক্ষা করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিপাইনে মৃত্যু বেড়ে ৫৩
পরবর্তী নিবন্ধকপোত খেলাঘর আসরের সাংস্কৃতিক আয়োজন