‘হোম ইন দ্য ওর্য়াল্ড’ : অমর্ত্য সেনের আত্মকথা ও বিশ্ববীক্ষা

কানাই দাশ | মঙ্গলবার , ২৮ জুন, ২০২২ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

এ সময়ের পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ অর্মত্য সেনের সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনী “হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড” বিশ্বের সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তাঁর অন্যান্য প্রকাশনার মতই। অমর্ত্য সেনকে একজন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ হিসেবে সবাই জানে। কিন্তু অমর্ত্যসেনের চিন্তার পরিধি অর্থনীতির সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর বিস্তৃত। কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড ও হার্ভাডে তিনি অর্থনীতি ও দর্শনের প্রফেসর হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে প্রথম নন বৃটিশ ও অশ্বেতাঙ্গ হিসাবে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ‘মাষ্টার’ নিযুক্ত হবার বিরল সম্মান লাভ করেন। সে বছরই তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পান। অর্থনীতি ও দর্শনের পারস্পরিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস, সমতামুখী সমাজ ব্যবস্থা এসব কিছুই তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণার বিষয়। নোবেল কমিটি তাঁকে পুরস্কৃতও করেছেন কল্যাণমুখী অর্থনীতির একজন প্রথিতযশা প্রবক্তা হিসাবে। “collective choice and social welfare” নামে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত বইয়ের মাধ্যমে তিনি কল্যাণমুখী অর্থনীতিবিদ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে অর্থনীতি, সমাজ ও দর্শন নিয়ে একের পর এক মৌলিক গ্রন্থ তিনি প্রকাশ করতে থাকেন। এর মধ্যে “On economic inequality” “commodities and capabilities”, “Ethics and Economics”, “Political Economy of Hunger”, “The Idea of justice”, “The Argumentative Indians”, “Identity and violence”, ইত্যাদি মৌলিক আর্থসামাজিক চিন্তাভাবনায় সমৃদ্ধ গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।

১৯৩৩ সনে শান্তি নিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন অমর্ত্য সেন। তাঁর নিজ বাড়ী ছিল মানিকগঞ্জে। ঢাকার ওয়ারিতে তাঁদের পৈতিৃক বাড়ী ছিল। তাঁর পিতা আশুতোষ সেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক। সেই সূত্রে অমর্ত্যসেনের শিক্ষাজীবন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরীজে শুরু হয়। অবশ্য ১৯৪১-৫১ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ১০ বছর তিনি শান্তি নিকেতনে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৫১ সনে তিনি প্রেসিডেন্সিতে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে ১ম হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৫৩ সালে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬০ সনে সেখান থেকে Choice of Technique নামক পিএইডি গবেষণাপত্র বের করেন। বিশিষ্ট লেখক ও ভারত তত্ত্ববিদ ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন তাঁর মাতামহ যিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের খুবই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও শান্তিনিকেতনের শিক্ষক। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম রাখেন অমর্ত্য। শান্তিনিকেতন ও রবীন্দ্র দর্শন তাঁর জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। রবীন্দ্রনাথের “ঘরে বাইরে” উপন্যাসের অনুকরণেই তিনি তাঁর আত্মজীবনীর নাম “হোম ইন দা ওয়ার্ল্ড” রেখেছেন বলে এখানে উল্লেখ করেছেন। মোট পাঁচটি খন্ডে ছাব্বিশটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত চমৎকার ইংরেজিতে লেখা প্রায় পাঁচশত পৃষ্ঠার বিশাল এই আত্মজীবনীতে তাঁর কৃতি জীবন ও কর্মের পরিচয় যেমন ফুটে উঠে তেমনি সমসাময়িক সমাজ, রাজনীতি, দর্শন ও ইতিহাস নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়, “রাজনৈতিক অর্থনীতি” বিষয়ে তাঁর ভাবনার ক্রমবিকাশ ও অবস্থান আমরা বুঝতে পারি। উপমহাদেশের ঘটনাবহুল বিগত শতকের চল্লিশের দশকের বৃটিশ সৃষ্ট ভয়াবহ মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িক বীভৎসতা, হত্যা, পরিণতিতে তাড়াহুড়ো করে অপরিকল্পিতভাবে দেশভাগ, উদ্বাস্তু স্রোতের ঢল এসব কিছু জীবন্তভাবে ধরা দিয়েছে তাঁর স্মৃতিকথায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঠান্ডাযুদ্ধ, পুঁজিবাদী পশ্চিমের অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে প্রবর্তিত কেইনসীয় অর্থনীতি, কল্যাণমূলক অর্থনীতি, অর্থনীতি ও নৈতিকতা, অর্থনীতি ও অসাম্য, উন্নয়ন অর্থনীতির স্বরূপ, মার্কসীয় অর্থনীতির প্রাসঙ্গিকতা, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অক্সফোর্ড, হাভার্ড, কেম্ব্রিজে মার্কস ও মার্কসীয় অর্থনীতির চর্চা ইত্যাদি নানা বিষয় যেমন পর্যায়ক্রমে এতে আলোচিত হয়েছে তেমনি আলোচনায় এসেছে প্রাক ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস, ভারতীয় জীবন ও দর্শনের যুক্তিবাদী ঐতিহ্য ও পরম্পরার ইতিকথা।

“A world of Arguments” শীর্ষক পঞ্চম অধ্যায়ে তাঁর পূর্বতন গ্রন্থ “Argumentative Indians” এর বক্তব্যই সংক্ষেপে আলোচিত। বিশেষ করে ১৯৩৪ সালে সংগঠিত পাটনার ভূমিকম্প নিয়ে গান্ধীর অযৌক্তিক ও কুসংস্কারাচ্ছান্ন ভাষ্য ও নিছক জাতীয়তাবাদ এই দুই বিষয়ে গান্ধীর সাথে রবীন্দ্রনাথের বিতর্কের বিষয় উঠে আসে। “The Presence of Past” শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে তিনি প্রাচীন ভারতীয় দর্শন বিশেষ করে বুদ্ধ দর্শনের নিরীশ্বরবাদিতা এবং গৌতম বুদ্ধের জীবন ভাবনা নিয়ে নিজের মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। “Bengal and the Idea of Bangladesh” শীর্ষক অষ্টম অধ্যায়ে তিনি দেশভাগ, সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ, জিন্নার রাজনৈতিক সুবিধাবাদ, কংগ্রেসের পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও প্রতিরোধে ব্যর্থতা, হিন্দুমহাসভা ও লীগের ধর্মভিত্তিতে দেশভাগের চক্রান্ত বিস্তৃতভাবে উঠে এসেছে। পরিচিতি সংকট বিশেষ করে মানবিক ও জাতীয় পরিচয়ের চাইতে ধর্মীয় পরিচয়ের প্রাধান্য যে, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মূল কারণ তা তিনি স্পষ্ট বলেছেন। ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের পক্ষে অমর্ত্য তার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে বলছেন যে ঐ পথেই বাঙ্গালি মুসলিম যথাযথ আত্মপরিচয় খুঁজে পেতে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন অতুলনীয় আত্মত্যাগের বিনিময়ে। দশম অধ্যায়ে প্রাক উপনিবেশিক ভারত ও বৃটেনের সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি কার্ল মার্কসের সাথে একমত হন যে, ইউরোপের তুলনায় ভারতের পশ্চাদপদতার অন্যতম কারণ হলো বৈশ্বিক জ্ঞান তথা রেঁনেসা ও শিল্প বিপ্লবের সাথে ভারতের বিচ্ছিন্নতা ও ধর্মান্ধ সংস্কারের আচ্ছন্নতা, কিন্তু মার্কস যে দর্শন, সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে প্রাচীন ভারতীয়দের অবদানের কথা একদম উল্লেখ করেননি তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাঁর মতে জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এক সময় ভারত ছিল বিশ্বের centre of excellence। শুধু তাই নয় তিনি দেখিয়েছেন যে, ১৬০০ সালে বিশ্বের মোট জিডিপিতে বৃটেনের অবদান যেখানে ছিল মাত্র ১.৮ শতাংশ সেখানে ভারতের অবদান ছিল ২২.৫ শতাংশ। কিন্তু বর্বর ঔপনিবেশিক শাসন ও লুটপাটের ফলে ১৯০০ সালে এসে চিত্রটা পুরো উল্টে যায়। ভারত একটি প্রবঞ্চিত ও দুর্ভিক্ষের দেশে পরিণত হয়।

জন হিকের “Value and Capital” গ্রন্থটি পড়ে গণিতে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। “College Street” নামক দ্বাদশ অধ্যায়ে তিনি বলছেন যে, তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্সিতে খ্যাতনামা মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর এক অভূতপূর্ব সমাবেশ ছিল। বৌদ্ধিক ভাবনায় তখন বামপন্থার প্রভাব সর্বত্রই। অমর্ত্যও এর বাইরে ছিলেন না। তিনি কমিউনিষ্ট পার্টি সমর্থিত ছাত্র ফেডারেশনের কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু কমিউনিষ্ট পার্টির সাংগঠনিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একরৈখিক ভাবনা, বহুত্ববাদী ভাবধারার অভাব তাঁর ভাষায় “austere narrowness” তাঁকে পার্টির কাজে উৎসাহিত করেনি। সহিষ্ণুতা ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি তিনি নিবেদিত ছিলেন কিন্তু মার্কসবাদকে তিনি কখনো বাতিল করেননি আবার অসহিষ্ণু এক রৈখিক পার্টিতন্ত্রের শাসনকে মার্কসবাদী পথ বলে মেনে নেননি। রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদদের বিপরীতে তিনি মার্কসের Labour theory of value কে উচ্চমূল্য দিয়েছেন। তাঁর মতে মার্কস যান্ত্রিক বস্তুবাদী ছিলেন না বরং বস্তু ও বিমূর্ত আইডিয়ার মিথস্ক্রিয়াকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র থাকা অবস্থায় তাঁর হাতে আসা নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ কেনেথ অ্যারোর “Social choice and individual values” নামক বইটি তাঁর চিন্তার জগৎ ও গবেষণাকে প্রভাবিত করে এবং সামাজিক চয়নতত্ত্বের বিষয়ে তাঁকে উৎসাহিত করে তুলে। “What to make Marx” নামক গুরুত্বপূর্ণ ত্রয়োদশ অধ্যায়ে তিনি স্তালিনবাদী কর্তৃত্ব পরায়ণতাকে মার্কসবাদের বিচ্যুতি বলে অভিহিত করে দেখিয়েছেন যে “জার্মান আইডিওলজী” নামক বিখ্যাত গ্রন্থে মার্কস ব্যক্তি স্বাধীনতা ও চয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন যা তাঁকে সামাজিক চয়ন তত্ত্বের ধারণাকে অগ্রসর করে নিতে প্রাণিত করে এবং কেনেথ এ্যারোর সামাজিক চয়নতত্ত্বের অসম্ভাব্যতার ধারণা অসারতা প্রমাণ করতে উৎসাহিত করে। কেনেথ এ্যারো তাঁর গ্রন্থে বলেছেন যে, সমাজের মঙ্গলের সাথে ব্যক্তির ইচ্ছার মেলবন্ধন অসম্ভব।

কেননা সমাজে সবার পছন্দ এক রকম হয়না। কিন্তু অমর্ত্যসেন এই তত্ত্ব খণ্ডন করে বলেছেন ব্যক্তির ইচ্ছা ও সামাজিক মঙ্গল এই দুটোর মধ্যে মেল বন্ধন ঘটানো সম্ভব, যদি ব্যক্তির মধ্যে র‌্যাশনাল বোধের সঞ্চার করা যায় অর্থাৎ ব্যক্তি যদি মনে করে যে সমাজে সবাই একমত হতে না পারলেও সমাজের মঙ্গলের স্বার্থে নিজের ইচ্ছা বড় হতে পারে না এবং সমাজের কল্যাণের মাধ্যমেই শুধু ব্যক্তির মঙ্গল সাধিত হতে পারে। এই বোধের উদাহরণ হিসেবে তিনি মার্কসের “গোথা কর্মসূচি”র কাজ অনুযায়ী মজুরী থেকে ক্রমে সম্ভাব্য প্রয়োজন অনুযায়ী মজুরী বন্টনের ধারণা সমর্থন করেন। র‌্যাশনাল বোধের বিকাশ নির্ভর করে মানুষের সক্ষমতা (Capability) ও অধিকার (Entitlement) নিশ্চিত করার উপর। জীবনধারণের জন্য বাঞ্চনীয় কাজগুলো করতে পারার সামর্থ্যই হলো সক্ষমতা এবং বেঁচে থাকার নূন্যতম প্রয়োজনের উপর অধিকার হলো স্বত্ত্বাধিকার (Entitlement)। এটাই হলো অর্মত্য সেনের সামাজিক চয়ন তত্ত্ব। কিন্তু সেনের মতে ব্যক্তির rational বোধ গড়ে তোলার জন্য চাই পাঁচটি আবশ্যকীয় শর্ত। সেগুলি হল- চিন্তা ও যুক্তির স্বাধীনতা, বাজারের স্বাধীনতা, আইনের সুবিধা পাবার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার স্বাধীনতা। এগুলোর অভাবে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও rationality গড়ে ওঠে না। আর capability না থাকলে entitlement থাকে না। অধিকার বলতে প্রফেসর সেন এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য এই তিন অধিকারের উপর জোর দিয়েছেন। এগুলো নিশ্চিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিহার্য বলে তিনি মনে করেন। শুধু বাজার ব্যবস্থা দিয়ে এই তিন অধিকার নিশ্চিত হয় না, এটাই অমর্ত্য সেনের বিশ্ববীক্ষা, যা মার্কসীয় প্রত্যয়গুলোর কাছাকাছি এবং যা বর্তমানে নয়া উদারবাদী অর্থনীতির সাথে একেবারেই যায় না।

তিনি মনে করেন, মাথাপিছু আয়ের হিসাব এক্ষেত্রে বুজরুকি মাত্র, তা বরং বৈষম্যের সূচক। তাঁর কাছে উন্নয়নের আসল সূচক হলো, জীবন যাপনের ভিত্তি- তথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টির নিশ্চয়তা। জিডিপি বাড়লেও কোন দেশে যদি অধিকাংশ মানুষের entitlement না থাকে, দারিদ্র্য সেখানে তীব্রতর হবে। কিন্তু তাঁর তত্ত্ব ও বিশ্ববীক্ষার সীমাবদ্ধতা হলো মানুষের সক্ষমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কোন ধরনের সরকার বা রাজনৈতিক ব্যবস্থা অপরিহার্য তা তিনি নিশ্চিত করেন নি, কেননা কর্তৃত্ববাদী বা বুর্জোয়া উদারনৈতিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাঁর চিন্তা বাস্তবায়ন অসম্ভব।

কেম্ব্রিজে ৫০ এর দশকের বিখ্যাত মার্কসবাদী অর্থনীতিবিদ মরিস ডব ইতালির কমিউনিষ্ট পার্টির বিশ্বখ্যাত মার্কসবাদী তাত্ত্বিক গ্রামশির ঘনিষ্ট বন্ধু পিয়েরা গ্রাফা এবং রবার্টসনের সান্নিধ্য তাঁকে বাম প্রভাবিত কল্যাণমুখী অর্থনীতির গবেষণায় ভীষণভাবে অণুপ্রাণিত করে। “প্রত্যেক মানুষ একেক জন দার্শনিক” প্রিজন নোট বুকে গ্রামশির এই ধারণা তাঁকে দর্শন ভাবনার গভীরে যেতে উৎসাহ দেয়। আত্মজীবনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ১৬-২৬ শেষ দশটি অধ্যায় অমর্ত্য সেনের অর্থনৈতিক চিন্তার বিকাশ, সমাজ দর্শন তথা আধুনিক এক বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠার প্রামাণ্য বর্ণনা ও চমৎকার ইতিহাস। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়, কল্যাণমুখী অর্থনীতি থেকে স্কান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর ক্রমবিচ্যুতি, পুঁজিবাদের বর্তমান সর্বোতমুখী নীতিহীন আগ্রাসীরূপ, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ভাবাদর্শের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, এসবের প্রেক্ষিতে অমর্ত্য সেনের দার্শনিক, রাজনৈতিক ও উদার মানবিক চিন্তাভাবনাকে, মানব মুক্তির সংগ্রামে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তাঁর আত্মজীবনী বিশ্বের প্রগতিশীল পরিবর্তনের বিশ্বাসী কর্মী ও উৎসাহী পাঠকদের জন্য অবশ্য পাঠ্য একটি গ্রন্থ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক; প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধহারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার কিছু ঐতিহ্যের গাছ
পরবর্তী নিবন্ধপরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই