হেমাঙ্গ বিশ্বাস : গণজাগরণের শিল্পী

| সোমবার , ২২ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

হেমাঙ্গ বিশ্বাস। বাংলা সংগীতজগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি সংগীত শিল্পী ও গীতিকবি। লোকসংগীত নির্ভর গণজাগরণমূলক গান গেয়ে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর অনেক কবিতাই সুরের মূর্ছনায় গান হয়ে উঠেছে।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম ১৯১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। হবিগঞ্জ হাইস্কুল থেকে পাশ করার পর তিনি শ্রীহট্ট মুরারিচাঁদ কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৮ সালে তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময়ে তিনি গ্রেফতার হন এবং তিন বছর বন্দী থাকেন। তিনি ছিলেন বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী। বেশ কিছুকাল ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকায় কাজ করেছেন। তাঁর রচিত গানে মেহনতী-শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-বেদনা আর শোষকের অত্যাচার নিপীড়নের বিমূর্ত চিত্র ফুটে উঠেছে। সেই সাথে আছে প্রতিবাদ, আছে স্বপ্ন জয়ের আশা। আর সবকিছু ছাপিয়ে অসাধারণ সুরের কারুকাজে গানগুলো হয়ে উঠেছে এক-একটি কাব্য। বুর্জোয়া প্রথা-প্রতিষ্ঠানের কাছে কখনোই নতজানু হননি হেমাঙ্গ বিশ্বাস। চল্লিশের দশকের মধ্যভাগে তিনি ফুঁসে উঠেছিলেন সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনে। তেভাগা আন্দোলনে তাঁর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ গণসংগীত কৃষকদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে। ১৯৭১ সালে মাস সিঙ্গার্স নামে নিজের দল গঠন করে জীবনের শেষ দিকেও তিনি গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেরিয়েছেন। তিনি কল্লোল, তীর, লাললণ্ঠন প্রভৃতি নাটকের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। লাললন্ঠন নাটকে তিনি বিভিন্ন চীনা সুর ব্যবহার করেছিলেন। রাশিয়ান গানও অনুবাদ করেন।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘জন হেনরির গান’, ‘শঙ্খচিলের গান’, ‘ফুলগুলি কোথায় গেল’, ‘তোমার কাস্তেটারে দিও জোরে শান’, ‘তোর সোনার ধানে বর্গী নামে’, ‘মাউন্টব্যাটেন মঙ্গলকাব্য’ প্রভৃতি। ১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন চাই