হুমায়ুন কবির। বিশ শতকের বাংলা ভাষার একজন প্রগতিশীল কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিবিদ। স্বল্প পরিসর জীবনে তিনি বেশ কিছু কবিতা এবং অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। বাম রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে বিপ্লবী সংগঠনের সাথে তাঁর যোগাযোগ হয় এবং গোপন রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের কারণে তাঁকে সহ্য করতে হয় জেল-জুলুম। হুমায়ুন কবিরের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর বরিশালে।
ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৬৫ সালে একই কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং ১৯৬৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম. এ. পাস করেন। ১৯৭০-এ বাংলা একাডেমি গবেষণা বৃত্তিলাভ করেন। বাংলা একাডেমিতে তার গবেষণার বিষয় ছিলো সাম্প্রতিক জীবন চৈতন্য ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা। ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
চাকরি জীবনে গোপন বিপ্লবী দলের সাথে সম্পৃক্ত হন তিনি। ‘পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি’ গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল সক্রিয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ব-মুহূর্তে বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার পাশাপাশি বাংলার প্রগতিশীল লেখক-সমাজও কলম ছেড়ে সরাসরি রাস্তায় নেমে আসেন। এই সংগ্রামী তরুণ লেখক গোষ্ঠির উদ্যোগে এ সময়ে সংগঠিত হয় ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’। বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পরপরই এই তরুণ লেখক গোষ্ঠির উদ্যোগে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’ । শুরুতেই একটি ‘আন্দোলন’ হিসেবে লেখক শিবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এ পর্যায়ে হুমায়ুন কবির ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’ এর আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের তৎকালীন তরুণ কর্মীদের মধ্যে সর্বজনাব আহম্মদ ছফা, ফরহাদ মাজহার, রফিক কায়সার, মুনতাসীর মামুন, হেলাল হাফিজ, রফিক নওশাদ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতার বই ‘কুসুমিত ইস্পাত’। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর প্রচুর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ‘বাংলাদেশ লেখক শিবিরের’ অন্যতম আহ্বায়ক থাকাকালেই ১৯৭২ সালের ৬ জুন অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে হুমায়ুন কবির নিহত হন। মৃত্যুর প্রায় এক যুগ পর ১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় ‘হুমায়ুন কবির রচনাবলী।