হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে

সড়ক দুর্ঘটনায় ভাঙল কোমরের হাড়

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টা। উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রবেশ করছিলো সার বেঁধে। এসময় হঠাৎ সাইরেন বাজিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে আসে একটি অ্যাম্বুলেন্স। কয়েকজন তরুণ ছুটে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থেকে স্ট্রেচারে করে এক ছাত্রীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেলো ওই ছাত্রী টেবিলের উপর পাতা বিছানায় বসে বালিশের উপর খাতা রেখে পরীক্ষা দিচ্ছে। সেই পরীক্ষার্থীর নাম মাকসুরাতুল জান্নাত। খবর নিয়ে জানা যায়, চারদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ওই ছাত্রী অ্যাম্বুলেন্স যোগে এসে বিশেষ ব্যবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় ওই ছাত্রীর বাবা সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার নুরুল মোস্তফার সাথে। তিনি জানান, সাতকানিয়া সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী মাকসুরাতুল জান্নাত এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে যাত্রীবাহী পিকআপে করে বাসায় ফেরার পথে মহাসড়কের সাতকানিয়াস্থ নয়াখাল এলাকায় পৌঁছার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। এসময় মাকসুরা গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে কেরানীহাট এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুর্ঘটনায় তার দুই পা, মাথায় আঘাত পাওয়ার পাশাপাশি কোমরের হাড় ভেঙে যায়। চিকিৎসক তাকে এক মাস বিশ্রামে থাকতে বললেও মাকসুরা বাকি পরীক্ষাগুলোতে অংশ নেয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে এবং হাসপাতালের বেডে শুয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অজিত কান্তি দাশ এবং কেন্দ্রের এইচএসসি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সাথে কথা বললে তারা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কক্ষের টেবিলের উপর বিছানা পেতে বিশেষ ব্যবস্থায় মেয়েকে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। আমি তাদের নিকট কৃতজ্ঞ। আহত পরীক্ষার্থী মাকসুরাতুল জান্নাত জানান, দুর্ঘটনার আগের সবকটি পরীক্ষা ভালো হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলোর জন্যও ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া শিক্ষাজীবন থেকে একটি বছর হারাতে চাইনি। এজন্য কষ্ট হলেও অ্যাম্বুলেন্সে করে এসে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি। পরীক্ষা শেষে আবারো হাসপাতালে চলে যাব। গত রোববারের পরীক্ষায়ও এভাবে অংশ নিয়েছি। উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অজিত কান্তি দাশ জানান, মাকসুরাতুল জান্নাত একজন মেধাবী ছাত্রী। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েও সে দমে যায়নি। অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল থেকে এসে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা একটি কক্ষে বিছানা পেতে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নিচ্ছি। গতকাল তার পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। আর একটি মাত্র পরীক্ষা বাকি রয়েছে।

পরীক্ষা কেন্দ্রের এইচএসসি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, মাকসুরাতুল জান্নাত হার না মানা এক মেধাবী ছাত্রী। সোজা হয়ে বসতে পর্যন্ত পারছে না। এরপরও সে পরীক্ষা থেকে বিরত থাকেনি। যখন তার হাসপাতালের বিছানায় থাকার কথা, তখন অ্যাম্বুলেন্সে করে এসে পরীক্ষা দিতে বসছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় চুলার আগুনে পুড়ল ৪ বসতঘর
পরবর্তী নিবন্ধআইআইইউসিতে আইএফএলের ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম