হালদায় আসছে মা মাছ

বৃষ্টির অপেক্ষায় ডিম আহরণকারীরা

কেশব কুমার বড়ুয়া, হাটহাজারী | মঙ্গলবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতি বছর বাংলা মাসের চৈত্রের প্রথম দিকে নদীতে মাছের আগমন ঘটে। মাতামুহুরী, সাঙ্গু, কর্ণফুলী, চেংখালী, পোরাকপলী, কাটাখালী, বোয়ালিয়া, সোনাই প্রভৃতি খাল ও নদীতে অবস্থানকারী মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে চলে আসে। ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে হালদায় মা মাছ আসে। বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি অপেক্ষাকৃত ঘোলাটে হলে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে।

স্থানীয়দের মতে, চৈত্র মাসে নদীতে পাওয়া ডিম দ্রুত বর্ধনশীল। তাই এই ডিমের প্রতি পোনা ব্যবসায়ী ও মাছ চাষিদের আগ্রহ বেশি। যদি চৈত্র মাসে প্রবল বর্ষণ ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হয় ও ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া যায় তাহলে বাংলা বছরের বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্যমাসে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। সম্প্রতি আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে দমকা হাওয়া ও বজ্রসহ প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন ডিম আহরণকারীরা। তাই তারা ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। মৌসুম সামনে রেখে হালদা নদীর দুই পাড়ে ডিম থেকে রেনু পোনা ফোটানোর সরকারিভাবে স্থাপিত হ্যাচারিগুলো উন্নয়ন, সংস্কার কাজও দ্রুত গতিতে করা হচ্ছে। তাছাড়া সনাতনী পদ্ধতিতে ডিম ফুটানোর মাটির কুয়াগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। নৌকা মেরামত ও রং করার কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছেন ডিম আহরণকারীরা।

এদিকে বিভিন্ন নদী, খাল ও ছরা থেকে হালদা নদীতে মাছের আগমণ অবাধ ও নিরাপদ করতে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক নদী পাহারা ও নদীতে অভিযান জোরদার করছে। নদী থেকে মাছ চুরি প্রতিরোধ করতে নদীর পারে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিসি ক্যমরা। এই ক্যমরার মাধ্যমে উপজেলা, জেলা এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে নদী তদারকি করা হচ্ছে। নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে নৌ পুলিশের টহল ও প্রশাসনের তদারকি জোরদার করা হচ্ছে।

গড়দুয়ারা এলাকার ডিম আহরণকারী কামাল সওদাগর ও মাদার্শা এলাকার আশু বড়ুয়া জানান, নদী থেকে ডিম আহরণের যাবতীয় প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। তদের অভিযোগ, এক শ্রেণীর কৃত্রিম রেনু পোনা ব্যবসায়ী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা গত বছরের রেনু বলে কৃত্রিম রেনু পোনা বিক্রি শুরু করেছে। তাদের কারণে হালদা নদী থেকে আহরিত ডিমের রেনু পোনার দীর্ঘদিনের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ নদীর মাছ শিকার রোধ করতে দুই পারে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছে। নদী পাহারা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাছাড়া চুরি করে মাছ শিকারীদের আটক করতে নদীতে সংস্থার পক্ষ থেকে সোলার চালিত বোড দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে ইউএনও এ বি এম মসিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান। তিনি নদীতে মাছের অবাদ বিচরণ ও মাছের মজুদ বৃদ্ধি, জীব বৈচিত্র্য ও ডলফিন রক্ষা করতে সার্বক্ষণিকভাবে নদীর দুই পাড়ের জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, আনসার ভিডিপি কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবার যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে হালদায় আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাবে। আর নদী থেকে আহরিত ডিম থেকে রেনু ফোটানোর জন্য সরকারিভাবে স্থাপিত হ্যাচারি ইতোমধ্যে সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী
পরবর্তী নিবন্ধমানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে বই পড়লে