হামিদুর রহমান : শহীদ মিনারের রূপকার

| সোমবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

হামিদুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। বাঙালির জাতিসত্তা ও স্বাধীন রাষ্ট্রসত্তার সংগ্রাম আর প্রেরণার প্রতীক জাতীয় শহীদ মিনারের রূপকার হিসেবে তিনি খ্যাত। ১৯২৮ সালে পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে হামিদুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মির্জা ফকির মোহাম্মদ ও মাতা জামিল খাতুন। তিনি ঢাকা আর্টস স্কুল (বর্তমান চারুকলা ইন্সটিটিউট) থেকে চিত্রকলার উপর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ও পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যান। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চিত্রকলার উপরে উচ্চশিক্ষার্থে ইউরোপ যান। প্যারিসের ইকোল দ্যা বোজ আর্টস শিক্ষাগ্রহণ করেন। এরপরে লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। প্যারিস, লন্ডন এবং ইতালির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চারুকলায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষ করে ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ রিসার্চ স্কলার হিসেবে যোগ দেন। কানাডার মন্ট্রিলে ফাইন আর্টস-এ শিক্ষকতা করেন বেশ কিছুকাল।১৯৫৯-১৯৬ পর্যন্ত তিনি পেনসিলভিয়া অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-চিত্রকলা বিষয়ে গবেষণা নিযুক্ত ছিলেন। হামিদুরের চিত্রকর্মে স্বদেশ, কাল আর সমকালীন সমাজ বাস্তবতা যেমন বিমূর্ত হয়ে ওঠে তেমনি পাক-হানাদার বাহিনির নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ জীবন্তরূপে উদ্ভাসিত হয়। শিল্পীর সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম ভাষা শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত জাতীয় শহীদ মিনার। মূলত এই মিনারটি এদেশের সকল সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। যুগ যুগ ধরে এই মিনারটি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এদেশের লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রতীক, আবহমান বাংলা ও বাঙালির মহান ঐতিহ্যের স্মারক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে শিল্পীর আঁকা ১৭০০ বর্গফুটের একটি দেয়াল চিত্রে আবহমান বাংলার রূপ ফুটে উঠেছে চমৎকার ব্যঞ্জনায়। ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউট গ্যালারি, লন্ডন, ব্রাজিল এবং কানাডাতেও তাঁর আঁকা দেয়ালচিত্র বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদক পেয়েছেন। শিল্পচর্চায় অবদানের ফলে হামিদুর রহমান দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৭২ সালে মাদার অ্যান্ড স্মোক চিত্রের জন্য তিনি ‘ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব বাংলাদেশী পেইন্টার্স’ থেকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তার ফ্লাওয়ার ইন মাই বডি চিত্র ইরানের ‘৫ম তেহরান দ্বিবার্ষিক’-এ প্রথম পুরস্কার লাভ করে। ১৯৮০ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ১৯ নভেম্বর শিল্পী হামিদুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক শিশু দিবস
পরবর্তী নিবন্ধযত্রতত্র আলোকসজ্জা থেকে বিরত থাকুন