ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। ঢাকার আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির নিচ তলার পার্কিং থেকে হেলমেটসহ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করার তথ্য জানাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।
তারা আরো জানিয়েছে, পাশের একটি ম্যানহোল থেকে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট উদ্ধার করা হয়, তবে নম্বর প্লেটটি যাচাই করতে গিয়ে পুলিশ দেখেছে যে সেটি আসলে ভুয়া। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। খবর বিডিনিউজের।
উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট এবং ভুয়া নম্বর প্লেটটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। আট ব্যক্তির হাতবদল হয়ে হামলার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মাইনুদ্দিন ইসলামের নামে মোটরসাইকেলটি কেনা হয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিক শনাক্তে তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। যদিও মোটরসাইকেল মালিক সন্দেহে আব্দুল হান্নান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব এবং তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ফয়সালের মা–বাবার জবানবন্দি : ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ২ আসামিকে আদালতে হাজির করেন।
প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই রুকনুজ্জামান বলেন, দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদনে বলা হয়, আসামিরা মামলার ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবগত আছেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামিরা এজাহার নামীয় আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীকে ঘটনার আগে ও পরে পালাতে এবং ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র লুকাতে সহযোগিতা করে। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ড করার প্রার্থনা করছি।
এদিকে এদিন ফয়সাল করিম মাসুদকে মাইক্রোবাস ভাড়া দেওয়া রেন্ট–এ কার ব্যবসায়ী মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এর আগে মঙ্গলবার ফয়সালের সহযোগী কবিরের ৭ দিন, সোমবার ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। আগের দিন রোববার তিন দিনের রিমান্ডে দেওয়া হয় হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সন্দেহভাজন মালিক মো. আব্দুল হান্নানকে।
রিমান্ডে শুনানিতে যা বললেন নুরুজ্জামান নোমানী : ফয়সাল করিম মাসুদকে মাইক্রোবাস ভাড়া দেওয়া রেন্ট–এ কার ব্যবসায়ী মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জলকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। আবেদনে বলা হয়, হাদিকে গুলি করার পরেই আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি এবং সোর্সের তথ্য মোতাবেক আসামি নুরুজ্জামান ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি পালানোর জন্য ফয়সালকে গাড়ি দিয়ে সাহায্য করেন। শুনানিকালে নুরুজ্জামান নোমানীকে আদালতে হাজির করা হয়।
শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, মাইক্রোবাস দেওয়ার মাধ্যমে প্রধান আসামির পালানোর পথ সহজ করে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে ফয়সালের অবস্থান খুঁজে পাওয়া যাবে। গুরুত্বপূর্ণ মামলা। হাদিকে নিয়ে সবাই চিন্তিত। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। নুরুজ্জামান নোমানীর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তার কিছু বলার আছে কি না জানতে চান আদালত।
তখন নুরুজ্জামান নোমানী আদালতকে বলেন, অনলাইন, হোয়াটসঅ্যাপে ফয়সালের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমার ‘রেন্ট–এ কার’ থেকে আগেও সে গাড়ি ভাড়া নিয়েছে। গাড়ি ভাড়া করে সে সাটুরিয়া যেত এবং আলাউদ্দিন পার্কে আসতো। ৯ মাস আগে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। কিন্তু গত তিন মাস আমাদের কোনো সাক্ষাৎ নেই।
তিনি বলেন, আমি গাড়ির ব্যবসা করি। সে আমার কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নেয়। গত বুধবারও আমার কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সাটুরিয়িা যায়। সেখান থেকে আবার আলাউদ্দিন পার্কে আসে। শুক্রবার সে আমার কাছে গাড়ি ভাড়া চায়। কিন্তু আমার সব গাড়ি ট্রিপে ছিল। আমি আমার পরিচিত সুমন ভাইকে ট্রিপটা দেই।
বিচারক তার কাছে জানতে চান, ওই ড্রাইভারকে চেনেন কিনা। নুরুজ্জামান বলেন, হ্যাঁ। কোথায় আছেন তিনি, বিচারক জানতে চাইলে নুরুজ্জামান বলেন, ডিবিতে আছে। আমার সঙ্গে তাকেও নিয়ে এসেছে।
নুরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার ফোন করে বলে, ভাই আমি বিয়ে করেছি। আপনার ভাবীকে নিয়ে একটু ঝামেলা হচ্ছে। গাড়িটা মৎস্যভবন পাঠিয়ে দেন। সুমন গাড়ি নিয়ে মৎস্যভবন যান। ফয়সাল আবার ফোন দিয়ে গাড়ি বিএনপি বাজার (আগারগাঁও) পাঠিয়ে দিতে বলে। আমি তখন ফয়সালকে বলি সুমন ভাইকে ফোন দিতে। পরে তারা যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, দুষ্টু লোকটার সঙ্গে আমার যখন পরিচয়, তখন তার লম্বা চুল ছিল। এখন টিভিতে দেখি ছোট ছোট চুল।
এরপর বিচারক তাকে বলেন, আপনি রেন্ট এ কারের ব্যবসা করেন। রিমান্ড মানে শাস্তি না। তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেন। আপনার কিছু হবে না। পরে আদালত থেকে তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ আসে।












